সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

রেলে ডাবল ডেকার কোচ যুক্ত করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। রেলে যাত্রী বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রবিবার (২৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়।

অবশ্য রেলওয়ের ৩০ বছর মেয়াদি মাস্টার প্ল্যানে ডাবল ডেকার কোচ সংগ্রহের কোনও পরিকল্পনা বিদ্যমান নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিবেশী দেশসহ অনেক দেশে এখন ডাবল ডেকার কোচ রয়েছে উল্লেখ করে কমিটির সভাপতি এ. বি. এম. ফজলে করিম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাস্টার প্ল্যানে না থাকলেও আমরা মাস্টার প্ল্যানে এটি যুক্ত করে ডাবল ডেকার সংযুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেছি। রেলের যাত্রী বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করে এই সুপারিশ করা হয়েছে।’

রেলওয়ের বর্তমানে ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা বাস্তায়নাধীন রয়েছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০৪৫ সালের ৩০ জুন সময়কালে ৬টি পর্যায়ে ২৩০টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। যাএতে ব্যয়ের পরিকল্পনা হয়েছে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রেলওয়ের মাস্টার প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এদিকে ঢাকার চার পাশে বৃত্তাকার রেললাইন স্থাপনে রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশয়ের কথা সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে বলে কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে। কমিটির আগের বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি বৃত্তাকার রেললাইন নির্মিত হলে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বদলে যাবে বলে উল্লেখ করেন। বৈঠকে রেল সচিব বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষাসহ এর বর্তমান অবস্থার কথা তুলে ধরেন। এ পর্যায়ে রেলের মহাপরিচালক বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে একটু সংশয় রয়েছে। প্রথম সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার পর কেআইএনডি (কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান) থেকেও একটি সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি সমগ্র ব্যবস্থাপনার অর্ধেক অংশ করতে চাচ্ছে। প্রকল্পটি ছিল যৌথ প্রকল্প— যেখানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বৃত্তাকার রাস্তা তৈরি করবে, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ তৈরি করবে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে বৃত্তাকার রেলপথ তৈরি করবে। প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব ছিল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণের প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ফেরত দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হলে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের প্রকল্পটিও বাস্তবায়িত হবে না। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি।

পরে কমিটি তিনটি মন্ত্রণালয়কে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের সুপারিশ করা হয়। এ সুপরিশের অগ্রগতি প্রতিবেদনে রবিবার বৈঠকে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে ঢাকা সার্কুলার রেল লাইন নির্মাণ সংক্রান্ত উদ্ভুত সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে জানানো হয়।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, তারা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করবে বলে আমাদের জানিয়েছে। এটা অনেক বড় একটি কাজ। সময় তো লাগবে।

বৈঠকে ঢাকা সার্কুলার রেললাইন নির্মাণের বিষয়ে কমিটি গুরুত্বারোপ করে বলে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

কমিটি একাধিকবার সুপারিশ করলেও রেলপথ মন্ত্রণালয় তাদের অব্যহৃত জায়গায় বৃক্ষরোপণ না করায় কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। রেলওয়ের এত জায়গা থাকার পরও কেন গাছ লাগানো হয়নি, তার কৈয়িয়ত চান কমিটির সভাপতি। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে কোনও গাছ লাগানো হয়নি। আগে সিআরবি এলাকায় গাছ লাগানোর সুপারিশ করা হলেও তার কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তাদেরকে একাধিকবার বলার পরেও গাছ লাগাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী যেখানে বৃক্ষরোপণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। সেখানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অবহেলা লক্ষ্য করেছি। বিষয়টির জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছি।

রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম জোনর ৬৪ হাজার একর জমিতে বৃক্ষরোপণের বিষয়ে স্থায়ী কমিটি নির্দেশনা প্রদান করে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এছাড়া চট্টগামে অবস্থিত ঐতিহাসিক ইউরোপিয়ান ক্লাব ও রেলওয়ে জাদুঘর যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য পুনরায় সুপারিশ করে স্থায়ী কমিটি।

কমিটির সভাপতি এ. বি. এম. ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য ও রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, মো. শফিকুল আজম খাঁন, গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ ও নাদিরা ইয়াসমিন জলি অংশগ্রহণ করেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *