ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

গত ৬ বছরে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১৬ সালে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিলো ৪ হাজার ১৬৭ কোটি ডলার। যা চলতি বছর মার্চে এসে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৭১ বিলিয়ন ডলারে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিলো ৪ হাজার ১৬৭ কোটি বা ৪১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭ সালে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিলো ৫ হাজার ১১৪ কোটি ডলার এবং ২০১৮ সালে ছিলো ৫ হাজার ৭০৬ কোটি ডলার। বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২০১৯ সালে ছিলো ৬ হাজার কোটি ডলারের কিছু বেশি। ঋণের পরিমাণ ২০২০ সালে এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৬৩ কোটি ডলারে।

এদিকে চলতি বছর মার্চে এসে বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৭১ বা ৯৫ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারে। মার্চ শেষে টাকায় দেশের বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৪৩ হাজার ২৬৯ কোটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিলো ৯ হাজার ৬৫০ কোটি বা ৯৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। গত তিন বছরে দেশের বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ৩২ বিলিয়ন ডলার। যদিও ২০২২ সালের তুলনায় কিছুটা কমেছে ঋণের পরিমাণ।

জানা যায়, এখন প্রতিবছর শুধু সুদ পরিশোধে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার মত খরচ হচ্ছে বাংলাদেশের। গেল ২০২২ সালেও ৯০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে। এ চাপ আরো বেড়েছে টাকার তুলনায় ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায়। এভাবে উল্লেখযোগ্য হারে বিদেশি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করছে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মকর্তারা।

এদিকে বৈদেশিক ঋণ বাড়ার পাশাপাশি দেশের জনগণের মাথাপিছু ঋণও বেড়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য মতে, দেশের জনপ্রতি বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৫৬১ দশমিক ৮৮ ডলার। অথচ ২০১৯ সালেও এ ঋণ ছিলো ৩৬২ দশমিক ১০ ডলারে। এতে করে জনপ্রতি আয় বাড়ার পাশাপাশি ঋণও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, সবচেয়ে বেশি ঋণ বেড়েছে ২০২১ সালে। করোনার পরের অর্থবছরেই বৈদেশিক ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে। যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ বিলিয়ন ডলার বেশি। এ পরিমাণ ঋণ বাড়ায় সুদ পরিশোধে চাপ তৈরি করে ডলারের উপর। তবে, ২০২১ সালে সরকারের তুলনায় বেসরকারি খাত বৈদেশিক ঋণ করে বেশি। এ বছরটিতে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করে দেশের বেসরকারি খাত। সরকারের তুলনায় বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার হার বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কাও তৈরি করে দেশের অর্থনীতিতে। কারণ, সরকার বিদেশি ঋণ নেয় দীর্ঘমেয়াদী। আর বেসরকারি খাত ঋণ নেয় স্বল্পমেয়াদী। যা পরিশোধের কারণে চাপ তৈরি হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশকে বিদেশি ঋণ দেয় সাধারণত বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক বা আইডিবি এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের বড় বড় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জেপি মরগ্যান, ভারতের এক্সিম ব্যাংক।

এদিকে দেশের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করছে সুদ পরিশোধ। গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ১৩ শতাংশেরও বেশি। টাকার অংকে যা প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে অভ্যন্তরীন ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ৮১ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করা হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া এ খাতে ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এরমধ্যে ৬৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি সুদ পরিশোধ করা হয়েছে দেশের ব্যাংকগুলোকে। বিদেশি লোনের ক্ষেত্রে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।

আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অভ্যন্তরীন ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হবে ৮২ হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় দেড় হাজার কোটি টাকা বেশি। বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হবে ১২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। যার ফলে ডলারের দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি সর্বোচ্চ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এদিকে রেমিট্যান্স কমছে। পাশাপাশি রফতানি আয়েও দেখা যাচ্ছে নিম্নমুখী প্রবণতা

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...