ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক স্থবরিতা শুরু হয় ২০২২ সালে। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি ডলারে ব্যাপক সংকট দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও বেশ কয়েকটি সূচকে ভালো অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড (এনসিসি)। ব্যাংকটি প্রায় ৭১৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যাংকটির প্রায় হাজার কোটি টাকা আটকে আছে।

বুধবার (১৭ মে) এনসিসি ব্যাংকের ৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ।

এসময় মামদুদুর রশীদ বলেন, পুরো ব্যাংক খাতে নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) বেড়েছে। করোনার সময়ে ব্যবসায়ীদের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছিলো। এতে অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরপরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অর্থনৈতি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এসবের প্রভাবে বর্তমান সময়ে নন-পারফর্মিং লোন বেড়েছে। এছাড়া এনসিসি ব্যাংকের প্রায় হাজার কোটি টাকা আইনি প্রক্রিয়ায়র মধ্যে আটকা পড়েছে।

তিনি বলেন, এনসিসি ব্যাংকের খেলাপি ও মন্দ ঋণের আকার কমিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও ব্যাংকের পাওনা পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ঋণ প্রস্তাবনা এবং বৈদেশিক বাণিজ্য প্রক্রিয়ার বিভিন্ন অসুবিধা নিরসনের জন্য কাজ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য এনসিসি ব্যাংক ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার দিক থেকে দেশের শীর্ষ তিন ব্যাংকের মধ্যে একটি এনসিসি। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আয় বাড়লেও আগের বছরগুলোর তুলনায় ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ কম দিয়েছে। এবিষয়ে মামদুদুর রশীদ বলেন, নতুন করে বিনিয়োগ করাও একধরনের ব্যয়। যে বছর বিনিয়োগ করি সেই বছরই মুনাফা পাওয়া যায় না। যখন আমরা নতুন নতুন যায়গায় বিনিয়োগ করতে যাচ্ছি তখন আমাদের ইনকাম রেশিও একটু বাড়বেই। আয়ের পুরোটা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করে খুশি রাখতে পারি। তবে কিছু অংশ মূলধন হিসেবে রেখে সেটা আবার বিনিয়োগ করতে পারি। এরফলে শেয়ারহোল্ডাররা ভবিষ্যতে উপকৃত হয়।

তিনি আরও বলেন, গত বছরের নভেম্বরে আমরা ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতিমধ্যে ইসলামিক ব্যাংকিং খাতে প্রায় ২১৪ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১৯ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ বোর্ড এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমোদ হয়েছে। আমাদের একটি অভিজ্ঞ ও দক্ষ শরীয়াহ্ বোর্ড রয়েছে। তাদের নেতৃত্বে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম আরও এগিয়ে নেওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবুজ ও টেকসই অর্থায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। এনসিসির ব্যাংকিং সেবাকে পেপারলেস করার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রীণ ফাইন্যান্স এবং সাসটেনেবল ফাইন্যান্সে গুরুত্ব দিচ্ছে বেসরকারি খাতের এই ব্যাংকটি। ২০২২ সালে গ্রীণ ফাইন্যান্সে প্রায় ২৭৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং সাসটেনেবল ফাইন্যান্সে ২ হাজার ৪৭৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসী অর্থায়নের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন মামদুদুর রশীদ।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...