সব কিছুরই নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিৎ। দেশে আইন রয়েছে ,প্রয়োগ কি রয়েছে ? বাক স্বাধীনতা মানে কি যাকে যখন ইচ্ছে মানহানি করা, বাকস্বাধীনতার চর্চা কি এমন হওয়া উচিৎ।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় , তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়ার কাছে যেন সবাই নাজেহাল। যে কেও যাকে ইচ্ছে তাকে কুরুচি মন্তব্য করে বসছে ,দেখার যেন কেও নেই। অথচ উন্নত বিশ্বে কঠোর ভাবে এই সোশ্যাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
বাংলাদেশের একজন সফল অভিনেতা, মডেল ও গায়ক চঞ্চল চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তার ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে লিখেছেন –
একটি জাতি গঠনে কারা এগিয়ে আসতে পারেন? বা জাতি গঠনে কাদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি—এমন প্রশ্নে রাজনীতিক, সংস্কৃতিমান, রুচিশীল ও দেশের দায়িত্বশীলদের ভূমিকার কথা সবার আগে আসে। কিন্তু সেখানে সবাই কি নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করছেন? নাকি নীরব? কারা বাক্স্বাধীনতার কথা বলে যা ইচ্ছা, তা–ই বলছেন? এসব স্বেচ্ছাচারিতায় কেন আজ চুপ সবাই। কেন সস্তা বিনোদনপ্রিয়তে পরিণত হচ্ছে একটি জাতি, এই ঘোর অন্ধকার শিগগিরই কাটবে কি? সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে এবার মুখ খুললেন চঞ্চল চৌধুরী। এই অভিনেতার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ঘাড়ে চেপে যখন অবাধে অসামাজিক কার্যকলাপ চলতে থাকে, তখন আমরা অধিকাংশ মানুষই শুধু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করি। এটি এখন আমাদের ব্রেনের ওপর বিষফোঁড়াসম সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমরা বাক্স্বাধীনতার কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলি, অথচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অধিকাংশ মানুষ স্বেচ্ছাচারীর মতো যা খুশি করছেন, যা ইচ্ছা, বলছেন। প্রশ্নটা এখানেই…
আধুনিকতা আর সম–অধিকারের ঝান্ডা তুলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনি কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার করছেন না? আপনার অরক্ষিত এই কার্যকলাপে সমাজ বা নতুন প্রজন্ম কতটুকু প্রভাবিত হচ্ছে, সেটুকু ভাবার অবকাশ কি আপনার আছে? আপনি কি সত্যিই সমাজের জন্য মঙ্গলজনক কিছু করছেন? ছোটবেলায় পড়তাম বিজ্ঞান “আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ? ” বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারই এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঠিক ব্যবহারই হয়তো জাতির জন্য ভালো ভূমিকা রাখতে পারত, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো রাখেও। কঠিন সত্য এটাই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বর্তমানে যতটা না সামাজিক কর্মক্ষেত্র, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি ব্যক্তিগত বাণিজ্য ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ফেসবুকে “রিল” নামক একটি বিষয় আছে। এখানে অধিকাংশই যে কতটা অশ্লীল, ভাবতেও অবাক লাগে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এসব অশ্লীলতার বিরুদ্ধাচরণ করি। সেন্সরবিহীন এসব অশ্লীল কার্যকলাপ কে বন্ধ করবে?
এখানে রাষ্ট্রের যথাযথ কর্তৃপক্ষের বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা কি আমরা আশা করতে পারি না? সেই সঙ্গে আপনার বা আমার অসচেতনতা অথবা সমর্থনের ভেতর দিয়ে তথাকথিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে বিতর্কিত কিছু ভাইরাল ব্যক্তি। তিনি যখন আপনার কাছে পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব দাবি করবেন, আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন? পারবেন না…কারণ আপনার বালখিল্য আচরণ, উদাসীনতা আর সস্তা বিনোদনপ্রিয়তায় আপনি সেই সন্তানকে জন্ম দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আপনার অরক্ষিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারই এর জন্য দায়ী।
আপনি কি আপনার সন্তানের কথা ভাবেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেন? যদি করেন, তাহলে অবশ্যই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারেও আপনাকেও অনেক দায়িত্বশীল হতে হবে। তথাকথিত কিছু অসৎ রাজনীতিবিদের কারণে যেমন রাজনীতি কলুষিত, তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার বা আমার সমর্থনে গজিয়ে ওঠা ভাইরাল ব্যক্তিদের কারণে সংস্কৃতি কলুষিত হচ্ছে। এর জন্য অন্য কেউ দায়ী নয়…দায়ী আপনি বা আমি, দায়ী আমাদের নিম্ন মানসিকতা। আপনি কাকে অনুসরণ করবেন বা সমর্থন দেবেন বা কে হবে এই দেশে আপনার রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক আদর্শ, চূড়ান্ত ভাবনার এই সময়টুকুও বোধ করি পেরিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো অবজ্ঞা করার মতো হলেও আমাদের সন্তানেরা ভবিষ্যতে অনুসরণ বা শ্রদ্ধা করার মতো কাউকে পাবে না। পরিচিত হতে হবে আপনার রুচিতে জন্ম দেওয়া কোনো ভাইরাল বিনোদন ব্যক্তির উত্তরসূরি হিসেবে।
কারণ, আপনি বা আমি ঠিক–বেঠিক বা উচিত–অনুচিতের পার্থক্য ভুলে সস্তা বিনোদনপ্রিয় জাতিতে পরিণত হয়ে গেছি। বুঝতে পারছেন কি, সামনে কতটা অন্ধকার? চুপ করে থাকা রাজনীতিক, সংস্কৃতিমান এবং রুচিশীলদেরকে বলছি, প্রস্তুত থাকুন, আপনাকে যেকোনো উপায়ে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানো হবে। তাই এখনো সময় আছে, মুখ খুলুন, প্রতিবাদ করুন। এই ব্যর্থতা প্রথমত রাষ্ট্রের, দ্বিতীয়ত তথাকথিত সংস্কৃতিকর্মীদের; যাঁদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল জাতিকে সঠিক পথ দেখানো, সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া।’