নভেম্বর ২৮, ২০২৪

কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের ব্রত নিয়ে ২০০৮ সালে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নে শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কের পূর্ব পাশে গড়ে তোলা হয় মিরাশার চাষি বাজার বহুমূখী সমবায় সমিতি লিমিটেড পরিচালিত ‘মিরাশার চাষি বাজার’। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগীতা ও উপজেলা প্রশাসন ও সমবায় কার্যালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কৃষকদের মাত্র ৩২ শতক জমির উপর বাজারটির পথচলা শুরু। প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরের ব্যবধানে বাজারটি সম্প্রসারিত হয়ে এখন তিন একরে পৌছেছে। কৃষক সমবায় ভিত্তিতে বাজারটিতে এখন ৮০টি ঘর তুলে এ অঞ্চলের উৎপাদিত কৃষিপণ্য কেনা-বেচা করছেন পাইকাররা। পদ্মাসেতু চালুর পর পুরো দৃশ্যপট বদলে গিয়ে মিরাশার চাষি বাজার এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপসহ বিশ^ বাজারে নাম করে নিয়েছে। বছরে এই বাজারে এখন প্রায় ৫৫০ কোটি টাকার সবজি বেচা-কেনা হয়। বাজারে কোন মধ্যস্বত্বভোগী না থাকায় কৃষকদের কোন খাজনা দিতে হয় না। ফলে কৃষকরা এখন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম পেয়ে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছেন, চাষি বাজারটি কেবল কৃষকদেরকেই লাভবান করছে না, পদ্মা সেতুর সুফলকে কাজে লাগিয়ে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের এই সময়ে শরীয়তপুরকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।

মিরাশার চাষি বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পাইকার মো. আব্দুল জলিল মাদবর বলেন, এ বাজারের করলা, বেগুন, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, কাচামরিচ, ফুলকপি, বাধাকপি, পটলসহ নানা সবজি নিয়মিত বেচা-কেনা হয়। এ সব সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শবর্তী জেলা মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, ভোলাসহ সিলেট, শ্রীমংগল, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা ময়মনসিংহ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কিনে নেয়। সূত্র বাসস।

এ বাজারে টাটকা সবজি পাওয়া যায় বলে চাহিদাও অনেক বেশি। এ ছাড়াও ২০২২ সাল থেকে এখানকার কিছু-কিছু সবাজি ইংল্যান্ড কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এই বাজারে ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত ভরা মৌসুমে এই বাজারে প্রতিদিন ৩ কোটি টাকার ও বাকি ৬ মাসে প্রতিদিন গড়ে ৫০ লাখ টাকার সবজি বেচা-কেনা হয়। এখানে কৃষকদের কাছ থেকে কোন খাজনা নেয়া হয়না বলে দিনে দিনে বাজারে কৃষকের উপস্থিতি বাড়ছে। ভরা মৌসুমের ৬মাস এই বাজারে প্রতিদিন সহ¯্রাধিক কৃষক ও বাকি ৬ মাস ৫ শতাধিক কৃষক তাদের উৎপাতিদ কৃষি পণ্য সরাসরি এখানে বিক্রি করেন।

জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের মিরাশার গ্রামের কৃষক মো. মোশারফ মোল্লা বলেন, মিরাশার চাষি বাজারটি আমাদের জন্য আশির্বাদ। এ বাজারটি প্রতিষ্ঠার আগে আমাদের সবজি দালালদের (মধ্য সুবিধাভোগী) দৌরাত্বের কারণে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করতে হতো। আবার দূরের বাজারে গেলে অনেক খাজনাও দিতে হতো। কিন্তু মিরাশার চাষি বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি চালু হওয়ার পর থেকে এখন আমাদের সবজি খুব সহজেই ভালো দামে বিক্রি করতে পারছি। ক্ষেত থেকে সবজি তুলে অত্যন্ত সহজে বাজারে নিয়ে আসতে পারছি কম খরচে। তাই আগের তুলনায় আমাদের লাভও হচ্ছে বেশি। তাছাড়া আমাদের দিনের কৃষিকাজ শেষ করে অতি সহজেই এখানে নিয়ে আসতে পারি। বাজার কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে কোন খাজনা আদায় করে না।

মিরাশার চাষি বাজার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. প্রিন্স খান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বাজারটিতে কৃষক ও পাইকারদের হয়রানি বন্ধে কমিটির লোকজন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। কোন অভিযোগ থাকলে তাৎক্ষণিক তা সমাধান করা হচ্ছে। ৩২ শতক জমির প্রথম প্রতিষ্ঠা হলেও সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এখন এ বাজারের পরিধি তিন একরের উপরে। এ বাজারটির সুনাম এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। পদ্মাসেতু হওয়ার ফলে এখানকার সবজি এখন খুব সহজেই ঢাকাসহ দেশের বাজারে পৌছে যেতে পারছে। ফলে জাজিরার কৃষকরা এখন আগের তুলনায় আরো বেশি লাভবান হচ্ছেন।

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নুর আহমেদ বলেন, মিরাশার চাষী বাজারটি কৃষক সমবায় সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় কৃষকরাই বেশি লাভবান হচ্ছেন। কৃষিপণ্যের গুণগত মান ঠিক রেখে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি। যাতে মানসম্মত সবজি উৎপাদন করে কৃষকরা বেশি দাম পায়। বাজার ব্যবস্থাপনার বিষয়েও আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। তাছাড়া পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর থেকে মিরাশার চাষি বাজারের বেচা-কেনার পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়েছে। কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের এই সময়ে বাজারটি জেলার কৃষিকে এগিয়ে নিতে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...