চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ১ হাজার ২২ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৬২ জন নারী এবং ৬৬০ জন কন্যাশিশু। এর পাশাপাশি ৫৩ জন নারী এবং ১৩৬ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল। ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ১৩ জন নারী ও ৩৪ কন্যাশিশু।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ-২০২৩ উপলক্ষে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম ও এডুকো বাংলাদেশের যৌথভাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জরিপের বরাত দিয়ে বলা হয়, ১০ মাসে ৬৯৫ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫০২ জন নারী এবং ১৯৩ জন কন্যাশিশু। এ ছাড়া নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার ৫৯০ জন নারী ও শিশু।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ঘরে সহিংসতার শিকার হয়েছে ১৭৯ জন নারী এবং ২০ কন্যাশিশু। পাচার এবং অপহরণের শিকার হয়েছেন ৩২ জন নারী এবং ১৩৬ কন্যাশিশু। এ ছাড়া যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৩৫২ জন।
তাদের মধ্যে ৯৬ জন নারী এবং ২৫৬ জন কন্যাশিশু।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের নারী ও কন্যাশিশুদের এখনো বঞ্চনা-বৈষম্য এবং নিপীড়ন থেকে মুক্তি ঘটেনি। বরং তাদের প্রতি সহিংসতা ক্রমাগত বাড়ছে। পরিবারে, সামাজিক পরিসরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও যানবাহনে কোথাও এ দেশের নারী ও কন্যাশিশুরা নিরাপদ নয়। নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতার একটি বড় অংশ হচ্ছে যৌন হয়রানি।
নাছিমা আক্তার আরো বলেন, ‘যতগুলো মামলা এখন পর্যন্ত হয়েছে সেগুলোর কোনোটারই পরিপূর্ণ বিচার হয়নি। সুতরাং বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে সেটা একটা বড় কারণ। যদি আমরা সঠিকভাবে বিচারগুলো করতে পারতাম এবং দৃষ্টান্ত সহকারে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারতাম তাহলে নারীর প্রতি এই নির্যাতন অনেকটাই কমে আসতো।’
নাছিমা আক্তার জলি বলেন, ‘জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম মনে করে, সংসদ নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলের নিকট নারী ও কন্যাশিশুদের সমস্যার ব্যাপকতা তুলে ধরা প্রয়োজন। যাতে দলগুলো তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী ইশতেহারে নারী ও কন্যাশিশুদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় প্রতিশ্রুতি ও পদক্ষেপ তুলে ধরে এবং বিজয়ী দল সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধের জন্য যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করার দাবি জানায় সংগঠনটি। পাশাপাশি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিশুদের জন্য একটি আলাদা অধিদপ্তর গঠন করারও দাবি জানানো হয়।
চাইল্ড রাইটস স্পেশাইজড অ্যান্ড এ্যক্টিভিষ্ট টনি মাইকেল গোমেজের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহসভাপতি শাহীন আক্তার ডলি, সহসম্পাদক ওয়াহিদা বানু, এডুকো বাংলাদেশের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রামস ফারজানা খান ও গুডনেইবারস বাংলাদেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রধান রাজিয়া সুলতানা