৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ রোজ শুক্রবার মহা অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গণে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার পক্ষে ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টারের পরিচালক মৃন্ময় চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নির্মল চ্যাটার্জি কার্যনির্বাহী সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, পংকজ দেবনাথ সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সম্মানিত আলোচক শ্রী জে.এল ভৌমিক সভাপতি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ , অধ্যাপক ড: নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক ড: চন্দ্রনাথ পোদ্দার সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং কার্যনির্বাহী সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সভাপতিত্ব করেন মনীন্দ্র কুমার নাথ সভাপতি মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, সঞ্চালনা করেন শ্রী রমেন মন্ডল সাধারণ সম্পাদক মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি। দুইদিনব্যাপী কেন্দ্রীয় জন্মষ্টমী উৎসব পালন করা হয়েছে।
প্রথম দিন ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় জন্মষ্টমীর মিছিল উপলক্ষে ঢাকার বিভিন্ন থানা থেকে ভক্তবৃন্দ সমাগম করে র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন। যারা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হয়েছেন তাদেরকে পুরস্কার বিতরণ করা হয় এবং অংশ্রগ্রহণকারীদের সকলকে বিশেষ আকর্ষণ পুরস্কার দেওয়া হয়। শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন – ”ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৫৩৪৯ বছর পূর্বে ভারতবর্ষে মথুরার কংসের কারাগারে দেবুকি ও বসুদেব এর পুত্ররূপে ভগবান শ্রী-কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ধর্মাবলম্বীদের মতে তিনি পরমেশ্বর বা স্রষ্টা। তিনি পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে ধার্মিকতার সমন্বয়কারী, তিনি অসুর বিনাশ করে ধর্ম স্থাপন করেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে অসংখ্য অলৌকিক কার্যক্রম করেছেন। যেহেতু শ্রী-কৃষ্ণ ভাদ্র মাসের অষ্টমীতিথিতে মানুষ রূপে জন্মগ্রহণ করেছেন তাই জন্মাষ্টমী শব্দের সাথে অষ্টমী শব্দ যুক্ত হয়ে প্রচলন হয়েছে। প্রতিবছর এই তিথিতে সনাতনী ধর্মাবলম্বী শ্রী-কৃষ্ণের পূজা অর্চনা বিশ্বের মানব শান্তি কামনার জন্য আয়োজন করে থাকেন।
শ্রী-কৃষ্ণের শিক্ষা ও উপদেশ লিপিবদ্ধ হয়েছে, তিনি বলেছেন বস্তুগত সুখ সর্বদা ক্ষণস্থায়ী। কেবল ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ ও ভক্তি গত একমাত্র তুষ্ট পথ। সম্মানিত সুধিমন্ডলী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠন করতে চেয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে এটি সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। সকল ধর্মের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষতাকে পরিচালনার জন্য মূলনীতি প্রতিষ্ঠান করেছিলেন।
ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়ে ২৫ শে মার্চ জাতির পিতা বলেছিলেন হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে, মুসলিম তার ধর্ম পালন করবে ও খ্রিস্টান- বৌদ্ধ যে যার মত ধর্ম পালন করবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ধর্মকে বাংলার বুকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। বঙ্গবন্ধুর দ্বারা ধারণ করা অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা
একটি উন্নতি জাতি গঠনে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। সকল ধর্মের অনুসারীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছেন। সকলের প্রতি অনুরোধ আসুন সবাই মিলে তোর ধর্মান্ধ অনুভূতি মানুষকে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল বিশ্বের ৩৫ তম বৃহত্তর অর্থনীতি দেশ।
প্রিয় ভক্তবৃন্দ আপনারা নিশ্চয়ই জানেন ২০২২ ধারাবাহিকতা ভাবে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের উন্নয়নের কাজ করছে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় মাধ্যমে দেয়াল ভাঙ্গা ১৩,৫০৮টি মন্দিরের সংস্কার উন্নয়ন করতে এটি ব্যয় হয়েছে ৩১৮ কোটি টাকা। ৮৮৯টি মন্দির সকল হিন্দুদের অনুরোধে ৩৩ কোটি তিন লক্ষ ৫০ টাকার হাজার ঢালাই করা হয়েছে।
৪২০৩ জন অস্বচ্ছল ও হিন্দু দুস্থ কেন্দ্রীয় অনুমতিতে কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টে মূলধন ২১ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি দ্রুত গতিতে শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির , শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, ঢাকা ,চট্টগ্রাম,গোপালগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মোট ১৫৮ টি মন্দির ও শ্মশান কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ঢাকেশ্বরী মন্দির উন্নয়নে ১০ কোটি টাকার সংস্কার কাজ চলমান আছে। ধর্মীয় পুরোহিত সেবাইতদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প আওতায় ইতিমধ্যে ৪৯ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করে জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে ৪১ হাজার ২১৬ জন পুরোহিতদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ৭৭,৪০০ টি মন্দিরে মন্দির ভিত্তিক শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক ৩০ হাজার ধর্মীয় শিক্ষা এবং ৪২ হাজার শিক্ষার্থীকে গীতা শিক্ষা সহ মোট ২ লক্ষ ২ হাজার জনকে শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। এই প্রকল্পে আওতায় ৭৪০০ উদ্বোধন কর্মকর্তা ও কর্মচারী শিক্ষক সহ ৭৭২২ জনকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে সকল কার্যক্রমকে আরো এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকল্প”।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জেএল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাস।
মৃন্ময় চক্রবর্তী বলেন, আমি বিশ্বাস করি ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক সংস্কৃতির ওপর স্থাপিত। যদি পলিটিকস (রাজনীতি) অন্যভাবে চলে যায়, তাহলে সংস্কৃতির ভিত্তি আমাদের ঠিক পথে চালিত করবে। সুতরাং আমাদের যে সংস্কৃতির ঐতিহ্য, সেই ঐতিহ্য ধরেই আমরা চলব। এখানে আমরা কৃষ্ণের জীবন সম্পর্কে কথা বলছি। কৃষ্ণ হচ্ছে পুরুষ বাকি সব প্রকৃতি। তিনি আমাদের ভালোবাসতে শিখিয়ে গেছেন। একটা কথা ভারতে আমি অনেক জায়গায় শুনেছি। রাম অনুকরণীয় এবং কৃষ্ণ চিন্তনীয়। এর মানে পারিবারিক জীবনে রামের কর্মকাণ্ড অনুকরণ করতে হবে। কৃষ্ণের কর্মকাণ্ড বা চিন্তায় ছিল ভক্তিবাদ। তিনি জাতপাতের বাইরে এসে সমাজ সংস্কারের কাজ করেছেন। তিনি একসঙ্গে রাজনীতিবিদ, সাম্যবাদ, সমাজ সংস্কারক ছিলেন। তিনি বলেছেন, সমাজের নিম্নস্তরের মানুষও আমার ভক্ত হতে পারে।
মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রাখতে চাই। পাশাপাশি আমাদের মনে যন্ত্রণা আছে। যদিও বলা হচ্ছে, আমাদের জন্য অনেক কিছু করা হচ্ছে। আমরা যোগ-বিয়োগ করে হিসাব মিলিয়ে দিতে চাই, সেটা সঠিক হিসাব করা হচ্ছে না। যদি তাই হতো, আমাদের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চলে, তখন সঠিক প্রতিকার পাওয়া যায় না। তাদের গ্রেপ্তার করা হয় না। তখন আমরা অসহায় বোধ করি। তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কোনো অপশক্তির হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে চাই না। একটি অপশক্তি, ধর্মীয়ভাবে যারা উগ্র, সন্ত্রাস করে, যারা বিভিন্ন দিক থেকে মৌলবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত, সেই ধরনের সরকার আমরা চাই না। আমরা অবশ্যই মানবতাবাদী সরকার চাই। কিন্তু মানবতাবাদী সরকারের মধ্যে যখন মৌলবাদী অপশক্তি ঢুকে যায়, তখন আমাদের সেই জায়গায় রুখতে হবে। তাই আমি মনে করি, সাংগঠনিক দিক থেকে আমাদের শক্তির বিস্তার ঘটাতে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই অবশ্যই আমরা আমাদের অবস্থান সেই জায়গায় নিয়ে যেত পারব।
ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইনসহ আমাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিকেল সাড়ে ৩টায় এবং দেশের সব জেলা ও উপজেলায় মানববন্ধন করব এবং ১৬ সেপ্টেম্বর সারা দেশে যুব কর্মশালা করা হবে।
ড. নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমাদের সব দেব-দেবীর হাতে অস্ত্র আছে। আমরা দেব-দেবীদের হাতে অস্ত্র দিয়ে নিজেরা কিছু না করে এগিয়ে যেতে চাই। কিন্তু তাদের নীতি নিজেদের মধ্যে ধারণ করি না। এটা সত্য, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। কিন্তু যারা অপশক্তি, সমাজে অশান্তি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কৃষ্ণের মন্ত্র ধারণ করে প্রতিরোধ করতে হবে।