প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে ব্যাংকের শাখা নেই সেখানেও মিলছে ব্যাংকিং সেবা। নগদ টাকা জমা, উত্তোলন, স্থানান্তর, বিভিন্ন পরিষেবার বিল পরিশোধ ও রেমিট্যান্সের অর্থ গ্রহণ— সাধারণ সব সেবাই এখন পাচ্ছে গ্রামের মানুষ। এসব সেবা পেতে বাড়তি চার্জও লাগছে না। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে এসব আর্থিক সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ‘এজেন্ট ব্যাংকিং’।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম এজেন্ট নিয়োগ দেয় ব্যাংক এশিয়া। এরপর একে একে যুক্ত হয় দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক। বর্তমানে কার্যক্রমে আছে ২৬টি ব্যাংক। যাত্রার আট বছরেই দ্রুতগতিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এ সেবা।
এজেন্ট ব্যাংকিং হলো শাখা না খুলে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার একটি ব্যবস্থা। বর্তমানে দেশে এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমাণও বাড়ছে। ব্যাংকগুলোতে ১৫ হাজারের বেশি এজেন্ট রয়েছে। দেশব্যাপী ২০ হাজার ৬০০টির বেশি আউটলেটে দেওয়া হচ্ছে ব্যাংক সেবা।
এজেন্ট আউটলেটে গ্রাহক সহজেই তার বায়োমেট্রিক বা হাতের আঙুল স্পর্শ করে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারছেন। সহজে লেনদেন করাসহ বাড়ির কাছে ব্যাংক সেবা পাওয়ায় গ্রাহকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ হিসাব বলছে, গত নভেম্বর মাস শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ছাড়িয়েছে এক কোটি ৭২ লাখ ৫১ হাজার।
গত নভেম্বর পর্যন্ত এই সেবার আওতায় গ্রাহক আমানত হিসাবে জমা করেছেন ২৯ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। যা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ছিল ২৪ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। তিন বছর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ছিল মাত্র ৩ হাজার ১৪ কোটি টাকা।
গত নভেম্বর মাসে ব্যাংকগুলো তাদের এজেন্টের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করেছে ৭৮৭ কোটি টাকা।
আলোচিত নভেম্বর মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। এ হিসাবে দৈনিক গড়ে লেনদেন হচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকার উপরে।
এজেন্ট ব্যাংকিং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নভেম্বরে ব্যাংকগুলোর এজেন্টের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে দুই হাজার ৮২৩ কোটি টাকা।
জানা যায়, বিশ্বের প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ব্রাজিলে। আর বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ২০১৪ সালে। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দেশে প্রথম ব্যাংক এশিয়া পাইলট প্রকল্প হিসেবে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলায় প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইসলাম শেখ ছিলেন দেশের প্রথম এজেন্ট।