ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

গত ৫ আগস্টেও দেশের অনেক ব্যাংক থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। ২ হাজার প্রাণের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, সেটিকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে বণিক বার্তা আয়োজিত ‘তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন-২০২৪’ অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সেখ বশির উদ্দিন।

তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ের রাজনীতিকরণ যেভাবে করেছি, তাতে মাঝে মাঝে ব্যবসায়ী পরিচয় দিতে লজ্জা হয়। আমি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনার খরচ কমানোর জন্য সামর্থ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৩ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক টাকাও ছাপায়নি। এছাড়া এই ৩ মাসে রিজার্ভ থেকেও কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি। বাজারে এখন ডলারের অভাব নাই। কেউ টাকা নিয়ে আসলে ডলার পাবে। তবে পিডিবি টাকা না থাকায়, তাদের ওভারডিউ পেমেন্ট করতে সমস্যায় পড়ছে। এটা সমাধান আমার কাজ না।

মূল্যস্ফীতি কমার জন্য কমপক্ষে ১২ মাস প্রয়োজন মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশের তথ্য আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি। তাদের পলিসি রেট বাড়ানোর পর ১২ মাস সময় লেগেছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসতে। আমাদের রেট বাড়ানো হয়েছে ৪ মাস হয়েছে। সে হিসেবে, আমাদের আরও ৮ মাস অপেক্ষা করতে হবে মূল্যস্ফীতি কমার জন্য।

এছাড়া বন্যার কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে বলে জানিয়েছে ড. আহসান এইচ মনসুর।

সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসলে বিনিয়োগ হবে না উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, আমি কেন, অন্য যে কেউ দায়িত্ব নিলেও এখনই বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই আমরা প্রথমে ম্যাক্রো ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটি (সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা) নিয়ে আসার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা এখন রিসিশনে [সংস্কার] যাবো না। সে জায়গা থেকে বের হয়ে এসেছি। তবে, গ্রোথ [প্রবৃদ্ধি] হয়ত কিছুটা কমতে পারে। আমাদের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারতো, হয়নি।

বিএনপি সরকারের দায়িত্ব নিলে জিডিপির ১০ শতাংশ স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সম্মেলনে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, আমরা দুটি বিষয়ে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিয়েছি- স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ এবং শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ করব। এটি আমাদের সিদ্ধান্ত।

আমির খসরু ব্যাখ্যা করেন, আমরা যদি নাগরিকদের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারি, তবে তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং তারা জাতির জন্য আরও ভালোভাবে অবদান রাখতে পারবে। এর ফলে সাশ্রয় হওয়া অর্থ পরিবারের অন্যান্য কল্যাণমূলক খাতে ব্যয় করা সম্ভব হবে। একই সুবিধা শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে, ফলে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগের অভাব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতে নিজস্ব পকেট থেকে খরচ আফগানিস্তানের চেয়েও বেশি।

আমির খসরু বলেন, এর ফলে কিছু মানুষ উপকৃত হচ্ছেন এবং তাদের সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে। বাজেটের সম্পদগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় বা একটি নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড সালেহউদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং।

এছাড়া, সম্মেলনে ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্বালানি ও অবকাঠামো, লিঙ্গবৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), ব্যাংক খাত, ব্যাংক খাত ও ডিজিটাল ইকোনমি, ব্যবসায় আইন ও ব্যবসার পরিবেশ এবং পুঁজিবাজার বিষয়ে প্যানেল আলোচক হিসেবে দেশের বিভিন্ন খাতের বিশিষ্টজনরা বক্তব্য রাখেন।

দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডিসহ প্রায় চার শতাধিক অতিথি অর্থনৈতিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...