দিনে রোদ ও গরম আর সন্ধ্যা নামতেই শীতের কামড়। কয়েক দিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় আবহাওয়া পরিস্থিতি এমনই। আবার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ফারাকও লম্বা। পরিস্থিতি এমন– দিনভর রোদ থাকলেও গতকাল রোববার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নামে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা চলতি মৌসুমের সবচেয়ে কম। বর্তমানে ৪৮ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ।
রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরেক দফা কমেছে। গতকাল দিনভর রোদ থাকলেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনে কুয়াশা কমে গিয়ে রোদের তীব্রতা বেড়েছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল না হতেই শীতের অনুভূতি ফিরে আসছে। তবে ঢাকার তুলনায় এর আশপাশের জেলায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। কোথাও কোথাও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শীতের তীব্রতা মধ্যাঞ্চল থেকে উত্তরাঞ্চলের দিকে অনেক বেশি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দিন একই ধরনের শৈত্যপ্রবাহ ও শীত অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় দিনে ও রাতে সমান ঠান্ডার অনুভূতি ছিল, তা কিছুটা অস্বাভাবিক। শীতকালে সাধারণত দিনে রোদ থাকে, রাতে শীত নামে। আগামী কয়েক দিন শৈত্যপ্রবাহের এলাকা বাড়তে পারে। বুধবার থেকে দেশের উপকূলীয় এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। বেশির ভাগ এলাকায় আকাশ মেঘলা হয়ে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জানুয়ারি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে শীতলতম মাস। এই মাসে বেশি শীত পড়বে– এটাই স্বাভাবিক। এ সময় উপমহাদেশে ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাস খুব ঠান্ডা হওয়ায় কখনও ‘জেড স্ট্রিম’ বা প্রচণ্ড গতিবেগসম্পন্ন বাতাস নিচে নেমে আসছে, কখনও ওপরে উঠে যাচ্ছে। এ কারণে শীতের প্রকোপ অন্য সময়ের চেয়ে বেশি।
এদিকে, দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বেশির ভাগ এলাকায় তীব্র শীতে জীবনযাত্রা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। রাতে ঘন কুয়াশায় যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। মহাসড়ক ও নদীপথে এ সমস্যা বেশি। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আসাদুজ্জামান জানান, এক দিনের ব্যবধানে ৩ ডিগ্রি কমে গতকাল সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। মাঘের হাড় কাঁপানো শীত ও কুয়াশায় দিনাজপুরে জনজীবন বিপর্যস্ত।
উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কাবু কুড়িগ্রামের জনপদ। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে শ্রমজীবীসহ পেশাজীবী মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। গত ১১ দিন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, গত পাঁচ বছরের মধ্যে তেঁতুলিয়ায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আজ সোমবার থেকে প্রতিদিনই রাতে তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি বাড়বে। ফলে শীতের তীব্রতা কমে আসবে। পাবনার ঈশ্বরদীতে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঈশ্বরদীতে এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত এটিই সর্বনিম্ন। টানা শৈত্যপ্রবাহে ঈশ্বরদীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আট দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে।
জয়পুরহাটে গতকাল বেলা ১১টার দিকে রোদের দেখা মিলেছে। তবে কমেনি শীত। এতে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী, ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তীব্র শীতের কারণে কুষ্টিয়ার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা
হয়েছে।