ডিসেম্বর ৩, ২০২৪

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন বাতিলসহ পরের তিনটি বিসিএস অর্থাৎ ৪৪,৪৫ এবং ৪৬-তম বিসিএস পরীক্ষার প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি ফাঁস হওয়া প্রশ্ন বা সুপারিশের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া সাব ইন্সপেক্টর ও বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগও বাতিল চেয়েছে দলটি।

আজ বৃহস্পতিবার গুলশান বিএনপির চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এবং ছাত্র—জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সম্প্রতি পদত্যাগকারী দলকানা পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক সম্পূর্ণ দলীয় বিবেচনায় বিসিএস ৪৩তম ব্যাচের সুপারিশকৃত ২০৬৪ জন প্রার্থীকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাপক ভিত্তিক যাচাই—বাছাই না করে ছাত্র—জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানে অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তীর সরকারের এই সিদ্ধান্ত ও নিয়োগ প্রক্রিয়া দেশের মানুষকে চরমভাবে হতভম্ব ও হতাশ করেছে। জনমনে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

সালাহউদ্দিন বলেন, দেশের বিভিন্ন শ্রেণি— পেশার মানুষের পক্ষ থেকে যেখানে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানানো হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে ৪৩তম বিসিএসের ঢালাও নিয়োগদানের মাধ্যমে সেই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের সরকারি প্রশাসনের উচ্চতর পদসমূহে পুনর্বাসন করার এই অন্তর্ঘাতমূলক সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার পরিপন্থি এবং কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি দাবি করেন, স্বাধীনতার অব্যবহিত পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় বিনা পরীক্ষায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী নিজ দলীয় ক্যাডার বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যকে সিভিল সার্ভিসে নিয়োগ প্রদান করে। এরাই ১৯৯৬ সালে প্রশাসনের ইন—সার্ভিস কর্মকর্তাদের চাকরির শৃঙ্খলা এবং সমস্ত নিয়মনীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রথমবারের মত তথকথিত ‘জনতার মঞ্চের’ আড়ালে আওয়ামী লীগের বিধ্বংসী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে দেশকে ভয়াবহ নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছিলো। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই প্রশাসনিক সমস্ত নিয়মনীতি শৃঙ্খলা ও মূল্যবোধকে ভেঙে দিয়ে দেশের প্রশাসন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি নিজেদের আজ্ঞাবহ দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলো।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা জানতে পেরেছি হাসিনা সরকারের সময় ইতোমধ্যে আবেদনকৃত ৪৪তম বিসিএসের যে ৯০০০ জনকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছিলো— তার মধ্যে ৩০০০ জনের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ৪৫তম বিসিএসের লিখিত উত্তরপত্রের মূল্যায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। অপর দিকে ৪৬ বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে তিন মাস পূর্বে। দেশের হাজার হাজার যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীদের বঞ্চিত করে দলীয় ভিত্তিতে বিবেচিত ও সুপারিশকৃত ৪৩তম বিসিএস বাতিল করার জন্য আমরা দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা দাবি করছি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে প্রবেশে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী গোষ্ঠীর এবং সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে এই তিনটি বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়াসমূহ পুরোপুরি বাতিল করা হোক। জুলাই—আগস্ট বিপ্লবে দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে ফ্যাসিবাদের দোসরদের যে কোন মূল্যে রুখে দিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে এ বিষয়ে আপস করার বিন্দুমাত্র কোন সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, আগেও একই প্রেক্ষাপটে ২৭তম বিসিএস এর চূড়ান্ত ফলাফল বাতিল করা এবং পুনরায় মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করার নজির রয়েছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...