৩৫ বছর আগে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে সগিরা মোর্শেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সগিরার স্বামীর করা মামলায় সন্ত্রাসী মারুফ রেজা ও আনাস মাহমুদকে আসামি করা হয়। সেই ঘটনায় করা মামলার রায় আজ বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা করবেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইনের আদালত।
এ রায়ে চার আসামির মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। অপর দিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। আসামিরা খালাস পাবেন, সেই প্রত্যাশা তাদের।
এ বিষয়ে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলি রফিকুল ইসলাম বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। রায়ে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছি।
এ বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ যে অভিযোগ এনেছে তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। সকল সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে আমরা আশা করছি আসামিরা খালাস পাবেন। আদালতের কাছে আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি।
১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় সগিরার স্বামীর করা মামলায় মারুফ রেজা ও আনাস মাহমুদকে আসামি করা হয়। ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম আদালতে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, সগিরা মোর্শেদের পরিবারের সঙ্গে আসামি শাহীনের বিভেদ তৈরি হয়েছিল। এছাড়া শাশুড়ি সগিরাকে অপছন্দ করতেন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সগিরা-শাহীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সম্বোধন করা নিয়েও ছিল পারিবারিক দ্বন্দ্ব।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, সগিরার কাজের মেয়েকে মারধর করেন আসামি ডা. হাসান আলী চৌধুরী। এ নিয়ে পারিবারিক বৈঠকে সগিরাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন শাহীন। আসামিরা নিজেদের বাসায় বসে সগিরাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ডা. হাসান আলী তার চেম্বারে আসা অন্য আসামি মারুফ রেজার সঙ্গে ২৫ হাজার টাকায় হত্যার চুক্তি করেন। চুক্তিকৃত ২৫ হাজার টাকার মধ্যে হাসান আলী মারুফ রেজাকে ১৫ হাজার টাকা দেন। ১০ হাজার টাকা পরে দেওয়ার কথা বললেও তিনি আর তাকে সেই টাকা দেননি।
২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত সগিরা মোর্শেদের ভাসুরসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩১ বছর পর এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর গত বছরের ১১ জানুয়ারি মামলার বাদী ও সগিরা মোর্শেদের স্বামী আব্দুস সালাম চৌধুরী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
মামলার আসামিরা হলেন, নিহতের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী ও তার স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন, শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান ও মারুফ রেজা। গ্রেপ্তার হওয়া চারজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৭ জন আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
গত ২৫ জানুয়ারি ঢাকার বিশেষ দায়রা জজ মোহাম্মদ আলী হোসাইনের আদালত রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।