নভেম্বর ২৬, ২০২৪

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের হাসপাতালগুলোতে মাত্র ২৪ ঘণ্টার জ্বালানি অবশিষ্ট রয়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। অর্থাৎ গাজার হাসপাতালগুলোতে থাকা জ্বালানির মজুদ আগামী ২৪ ঘণ্টা বা এর কিছু কম বা বেশি সময়ের মধ্যে ফুরিয়ে যেতে পারে।

এতে করে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে হাজার হাজার রোগীর জীবন। সোমবার (১৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার হাসপাতালগুলোতে যে পরিমাণ জ্বালানির মজুদ রয়েছে তাতে আর মাত্র ২৪ ঘণ্টা কাজ চলতে পারে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে। জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় তার ওয়েবসাইটে বলেছে, ‘জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে ব্যাকআপ জেনারেটর বন্ধ হয়ে গেলে গাজার হাজার হাজার রোগীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’

মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতিস্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত সপ্তাহে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামের একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।

হামাসের এই অভিযানে ২৮৬ সেনাসদস্যসহ ১৪০০ ইসরায়েলি নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও হাজার হাজার ইসরায়েলি। এছাড়া আরও বহু মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস।

পরে হামাসের হামলার প্রতিশোধে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সীমান্ত প্রাচীরের কাছে অবস্থান নিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর শত শত ট্যাংক। আশঙ্কা করা হচ্ছে— যে কোনও সময় গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু হতে পারে।

এছাড়া হামাসের হামলার পর থেকেই গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য, পানি ও পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে ভূখণ্ডটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল।

বিবিসি বলছে, জ্বালানি ও পানিসহ মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বেশ কয়েকটি ত্রাণ সংস্থা গাজায় প্রবেশের আহ্বান জানানোর পর জাতিসংঘের এই সতর্কবার্তা সামনে এলো। এর আগে গাজায় ডক্টরস উইদাউট বর্ডারে কর্মরত ব্রিটিশ-ফিলিস্তিনি সার্জন গাসান আবু সিত্তা সতর্ক করে জানান, অসুস্থ লোকদের সাহায্য করার জন্য তার হাসপাতালের কর্মীদের কাছে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রে, এই জরুরি পরিস্থিতিতে আমরা প্রতিদিন এক মাস বা দেড় মাসের চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করি।’

এদিকে সমগ্র গাজা উপত্যকায় পানি সরবরাহ পুনরায় চালু করার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি)। জাতিসংঘে আইসিআরসি-এর স্থায়ী পর্যবেক্ষক ল্যাটিটিয়া কোর্তোয়া বলেছেন, ‘বেসামরিক নাগরিকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করা যুদ্ধরত পক্ষগুলোর জন্য আবশ্যক। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর সরবরাহ যত দ্রুত সম্ভব পুনরায় চালু করতে সহায়তা করার জন্য আমরা আহ্বান জানাই।’

কোর্তোয়া আরও বলেছেন, বর্তমান উত্তেজনা ও সংঘাতের সাথে জড়িত সকল পক্ষের সাথে কথা বলছে তার সংস্থা।

বিবিসি বলছে, বর্তমানে গাজায় আইসিআরসি-এর শতাধিক সদস্যের একটি দল রয়েছে। কোর্তোয়া বলেন, ‘তারা এখনও ক্ষতিগ্রস্ত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক করার চেষ্টা করছে, অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাওয়া চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও প্যারামেডিকদের সহায়তা করার চেষ্টা করছে। আমরা বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার মানুষের সহায়তায় কাজ করার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি সৈন্যরা যদি স্থল পথে গাজায় প্রবেশ করে, তাহলে রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে এবং এতে করে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...