ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

চলতি জুলাই মাসের প্রথম ২১ দিনে ১৪২ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। দেশীয় মুদ্রায় প্র‌তি ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা ধরে এর পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার ৪৭৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুলাই মাসের প্রথম ২১ দিনে ১৪২ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। দেশীয় মুদ্রায় প্র‌তি ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা ধরে এর পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার ৪৭৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার বেশি। আর প্রতিদিন আসছে ৭ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।

আলোচিত সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১৯ কোটি ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার। প্রবাসী আয় আসার এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে দুই বিলিয়ন ডলার বা ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের শেষ মাসে অর্থাৎ জুনে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। একক মাস হিসেবে এটি প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় ছিল। এর আগে সবশেষ গত ২০২০ সালের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার এসেছিল। আর বিদায়ী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। এটি এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।

এদিকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে রেমিট্যান্স না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউ। গত মাসে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রেমিট্যান্স প্রবাহ ব্যাপকহারে বাড়ে। মাসটিতে রেমিট্যান্স এসেছে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ঢাকা জেলার প্রবাসীরা। আর সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে পার্বত্য অঞ্চলের জেলা বান্দরবানে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ঢাকা জেলায় রেমিট্যান্স এসেছে সর্বোচ্চ ৬৯৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। আর বান্দরবানে এসেছে মাত্র ১ কোটি ৯৯ লাখ ডলার।

এদিকে ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। তার আগের অর্থবছরে বিক্রি করে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির কারণে ধারাবাহিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। সবশেষ আন্তর্জাতিক মনিটরি ফান্ডের (আইএমএফ) চাপে গ্রস রিজার্ভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরফলে রিজার্ভ ব্যাপকহারে কমে ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবিবি ও বাফেদার ওপর। এরপর থেকে এ দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।

সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে ২ হাজার ১০২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যার পরিমাণ এর আগের অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১.০৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...