চার বছরের বেশি সময় পর আবারও ওয়ানডে ক্রিকেটে মুখোমুখি হচ্ছে দুই চিরপ্রতিন্দ্বন্দি ভারত-পাকিস্তান। এশিয়া কাপে তৃতীয় ম্যাচে আগামীকাল মুখোমুখি হবে বিশ্ব ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি। নিজেদের প্রথম ম্যাচেন বিশাল জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করছে পাকিস্তান দিকে আসরে প্রথমবারের মত খেলতে নামছে ভারত। মর্যাদার লড়াইয়ে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না দল দু’টি।
শ্রীলংকার পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ভারত-পাকিস্তান মহারণ।
২০১৯ বিশ্বকাপে সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল উপমহাদেশের দুই দল ভারত-পাকিস্তান। সে বছর ১৬ জুন ইংল্যান্ডের ম্যানচেষ্টারে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি বৃষ্টি আইনে ৮৯ রানে জিতেছিলো ভারত। এরপর ওয়ানডে ফরম্যাটে না হলেও এ সময়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে চারবার মুখোমুখি চয়েছে ভারত-পাকিস্তান। দু’বার করে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপ ও এশিয়া কাপের মঞ্চে । এরমধ্যে সমান দু’বার করে জয় ও হারের স্বাদ পেয়েছে দল দু’টি।
এবারের এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান ও নেপাল। মুলতানে নিজেদের মাঠে নেপালকে উড়িয়ে দেয় পাকিস্তান। অধিনায়ক বাবর আজম ও ইফতিখার আহমেদের জোড়া সেঞ্চুরিতে রেকর্ড ২৩৮ রানে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। রান বিবেচনায় এশিয়া কাপের ইতিহাসে এটি পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে ২০০০ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৩৩ রানে জয় পেয়েছিলো পাকিস্তান।
ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাবরের ১৫১ ও ইফতিখারের অপরাজিত ১০৯ রানের সুবাদে ৬ উইকেটে ৩৪২ রানের পাহাড় গড়ে নামে পাকিস্তান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৯তম সেঞ্চুরি করে রেকর্ড বইয়ে নাম তুলেন বাবর। একই সাথে ১০২ ইনিংসে দ্রুততম ১৯ সেঞ্চুরির মালিকও এখন বাবর।
৩৪৩ রানের টার্গেটে ১০৪ রানে গুটিয়ে যায় এশিয়া কাপে অভিষেক হওয়া নেপাল। বোলিংয়ে পাকিস্তানের পক্ষে ২৭ রানে ৪ উইকেট স্পিনার শাদাব খান। নেপালের বিপক্ষে বড় জয়ের পরও উচ্ছসিত ছিলেন না পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। কারন ভারতের বিপক্ষে মহারণ নিয়েই তার সব চিন্তা-ভাবনা । ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে সতর্ক বাবর বলেন, ‘নেপালের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল প্রস্তুতির ভাল সুযোগ । ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হতে চাই না। ভারতের বিপক্ষে জয় পাওয়া সহজ হবে না। কারণ, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে কি হবে তা আগ থেকে বোঝা যায় না। আমরা সতর্ক থাকতে চাই।’
ভারতের বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা উজার করে দিতে মুখিয়ে থাকা বাবর আরো বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা দিতে হবে। তবে অতিরিক্ত চাপ নিতে চাই না। আশা করি, ফল আমাদের পক্ষেই আসবে। আমাদের ব্যাটার-বোলাররা দারুন ছন্দে রয়েছে। ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিং-বোলিং উভয় ক্ষেত্রেই শুরুটা ভাল করতে হবে।’ খবর বাসস।
এ দিকে এশিয়া কাপের আগে শ্রীলংকার মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে শীর্ষ স্থান দখল করেছে পাকিস্তান। বিশে^র এক নম্বর দলের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে সতর্ক ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিনি বলেন, ‘যেকোন ফরম্যাটেই শক্তিশালী এক দল পাকিস্তান। ওয়ানেডেতে এখন শীর্ষে রয়েছে তারা। পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেতে তাদের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে আমাদের। আমাদের ব্যাটিং-বোলিং বিভাগ অনেক শক্তিশালী। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে সেরা ক্রিকেটই খেলতে হবে। পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিংকে সামলাতে আমাদের ব্যাটারদের বড় দায়িত্ব নিতে হবে।’
ওয়ানডে ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ১০ ম্যাচের মাত্র ৩টিতে পরাজয়ের পরিসংখ্যান মনে করিয়ে দিয়ে রোহিত বলেন, ‘গেল কয়েক বছরে ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমাদের পারফরমেন্স বেশ ভালো। ১০ ম্যাচের মধ্যে ৭টিতেই জিতেছি আমরা। দল হিসেবে খেলতে পারলে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারব আশা করছি।’
ভারতের সেরা ব্যাটার বিবাট কোহলির দৃস্টিতে পাকিস্তানের প্রধান শক্তি বোলিং। তাদের বোলারদের সামলাতে পারলে জয় পাওয়া কঠিন হবে না। কোহলি বলেন, ‘আমার মনে হয়, পাকিস্তানের প্রধান শক্তি বোলিং। তাদের দলে দারুণ কিছু বোলার আছে। যে কোন মুহূর্তে ম্যাচের গতি পাল্টে দিতে পারে তারা। তাদের বিপক্ষে খেলতে গেলে নিজেদের সেরা ছন্দে থাকতে হবে আমাদের।’
দল সাজানো নিয়ে চিন্তা নেই পাকিস্তানের। সদ্য চারটি ওয়ানডে ম্যাচে জয় সেটারই প্রমান দেয়। কিন্তু একাদশ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ ভারতের কপালে। বিশেষভাবে মিডল অর্ডার নিয়ে। ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সুস্থ না হবার পরও এশিয়া কাপের দলে নেয়া হয় দুই মিডল অর্ডার ব্যাটার শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুলকে।
এশিয়া কাপের জন্য দলের কন্ডিশনিং ক্যাম্পে আইয়ার পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠলেও, এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে গেছেন রাহুল। এজন্য মিডল অর্ডারে কোন ব্যাটারকে খেলানো হবে, সেটি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্বান্ত নিতে পারেনি ভারত।
ভারতের প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড় জানিয়েছেন, উইকেটরক্ষক হওয়ায় একাদশে সুযোগের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ইশান কিশানের। সেক্ষেত্রে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে পারেন কিশান।
এদিকে, ১৩ মাসেরও বেশি সময় পর ভারতের হয়ে ওয়ানডে খেলতে নামবেন পেসার জসপ্রিত বুমরাহ। ইনজুরির কারনে দীর্ঘদিন দলের বাইরে ছিলেন তিনি। গেল মাসে আয়ারল্যান্ড সফরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলতে নামেন বুমরাহ। দুই ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হয়েছিলেন বুমরাহ। এবার ৫০ ওভারের ম্যাচে পরীক্ষা দিতে হবে তাকে।
গেল সপ্তাহে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে শীর্ষে উঠে পাকিস্তান। ১১৯ রেটিং নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তান। ১১৮ রেটিং নিয়ে তালিকার দ্বিতীয়স্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয়স্থানে থাকা ভারতের আছে ১১৩ রেটিং।
কাল ভারতের কাছে হেরে গেলে শীর্ষস্থান হারাতে হবে পাকিস্তানকে। ১১৭ রেটিং নিয়ে দ্বিতীয়স্থানে নেমে যাবে বাবর আজমের দল, শীর্ষে উঠবে অস্ট্রেলিয়া।
ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত ১৩২ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এরমধ্যে ভারতের জয় ৫৫টিতে, পাকিস্তানের জয় ৭৩টিতে। ৪টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
এশিয়া কাপে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট মিলিয়ে সর্বমোট ১৬বার দেখা হয় ভারত ও পাকিস্তানের। এরমধ্যে ১৩ ওয়ানডেতে ৭টিতে জিতেছে ভারত, ৫টি জিতে পাকিস্তান ও ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। টি-টোয়েন্টি সংস্করনে ৩বারের দেখায় ২বার ভারত ও ১বার জয় পায় পাকিস্তান।
গেল বছরের অক্টোবরে সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিলো ভারত-পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের ঐ ম্যাচে কোহলির মহাকাব্যিক ৫৩ বলে অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংসের সুবাদে ৪ উইকেটে জিতেছিলো ভারত।
ভারত দল : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, সূর্যকুমার যাদব, তিলক ভার্মা, ইশান কিশান, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, শারদুল ঠাকুর, জসপ্রীত বুমরাহ, মোহাম্মদ সামি, মোহাম্মদ সিরাজ, কুলদীপ যাদব ও প্রসিধ কৃষ্ণ।
পাকিস্তান দল : বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সাউদ শাকিল, ফখর জামান, আবদুল্লাহ শফিক, ইমাম-উল-হাক, সৌদ শাকিল, সালমান আলি আঘা, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ নাওয়াজ, উসামা মীর, হারিস রউফ, নাসিম শাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ হারিস, ফাহিম আশরাফ, মোহাম্মদ ওয়াসিম।