সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪

দেশবাসীকে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে ১৫ আগস্ট “শোক দিবস” পালনের আহবান জানিয়ে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বার্তাটি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

পাঠকদের জন্য শেখ হাসিনার পুরো বার্তাটি তুলে ধরা হলো-

শেখ হাসিনা বার্তার শুরুতে বলেছেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম। ভাই ও বোনেরা, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। একই সঙ্গে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা, আমার তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেনেন্ট শেখ জামাল, কামাল ও জামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার ছোট ভাই যার বয়স মাত্র ১০ বছর ছিল শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমার একমাত্র চাচা মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গু শেখ নাসের, রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জামিল উদ্দিন, পুলিশ অফিসার সিদ্দিকুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমি তাদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, কৃষিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ১০ বছরের ছেলে আরিফ, ১৩ বছরের মেয়ে বেবি, ৪ বছরের নাতি সুকান্ত, ভাইয়ের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শহীদ সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে রেন্টুসহ অন্যান্য অনেককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৫ আগস্ট যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শহীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

গত জুলাই মাস থেকে আন্দোলনের নামে যে নাশকতা, অগ্নি সন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে অনেকগুলি তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ এমন কী অন্তঃসত্ত্বা নারী পুলিশ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সেবী, কর্মজীবী মানুষ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, পথচারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করছি এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আমার মতো যারা বেঁচে আছেন তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। আমি এ হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।

প্রিয় দেশবাসী, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে যে নারকীয় হত্যার ঘটনা ঘটেছিল সেই স্মৃতি বহনকারী বাড়িটি আমরা দুই বোন বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করেছিলাম। গড়ে তোলা হয়েছিল স্মৃতি জাদুঘর। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এ বাড়িতে এসেছেন। স্বাধীনতার স্মৃতিবহনকারী এ জাদুঘরটি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, স্মৃতিটুকু বুকে ধারণ করে আপনজন হারাবার সব ব্যথা-বেদনা বুকে চেপে রেখে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষ্য নিয়ে প্রিয় দেশবাসী আপনাদের সেবা করে যাচ্ছি। তার শুভ ফলও আপনারা পেতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। আজ তা ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। আর যে স্মৃতিটুকু আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল তা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। চরম অবমাননা করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি আত্মপরিচয় পেয়েছি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। লাখো শহীদের রক্তের প্রতি অবমাননা করেছে। আমি দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই।

প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের কাছে আবেদন জানাই যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে ভাব গম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট পালন করুন। বঙ্গবন্ধু ভবনে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া মোনাজাত করে সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করুন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল করুন। খোদা হাফেজ। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’

এর আগে ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার রোষের মুখে পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি থেকে ১১ আগস্ট তার নেতা কর্মীদের উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়েছেন, সেখানে তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের মনোবল না হারাতে বলেছিলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার দলের নেতা কর্মীদের বলেন, আশা হারাবেন না, মনোবল শক্ত করুন। আমি শিগগিরই ফিরে আসবো। আমি হেরে গেছি কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ জিতেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস নাউকে তিনি জানিয়েছিলেন, আমি ক্ষমতায় থাকতে পারতাম যদি আমি সেন্ট মার্টিন এবং বঙ্গোপসাগর আমেরিকার কাছে ছেড়ে দিতাম। আমি পদত্যাগ করেছি যাতে আমাকে লাশের মিছিল দেখতে না হয়। তারা আপনাদের (ছাত্রদের) লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল, আমি তা করতে দেইনি। হয়তো আজ যদি আমি দেশে থাকতাম তাহলে আরও প্রাণহানি হতো, আরও সম্পদ ধ্বংস হয়ে যেত।”

এর পরদিনই শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্ট করে তিনি জানান, দেশ ছাড়ার আগে ও পরে আমার মা কোনো বিবৃতি দেন নি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *