শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ৯ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন মাইকেল চাকমা। আজ সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে এ অভিযোগ জমা দেন তিনি।
গুমের সময় যেই গামছা দিয়ে তার হাত বাধা হয়েছিল সেটিও ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছেন এই ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নেতা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিশিষ্ট নৃবিজ্ঞানী অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ।
এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর পাঁচ বছর গুম করে রাখার ঘটনায় জড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ জমা দেন মাইকেল চাকমা। ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল তদন্ত শুরু করে।
মৌখিক অভিযোগ করার পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমরা মাইকেল চাকমার অভিযোগ আমলে নিয়েছি। শিগগির তার অভিযোগের তদন্ত শুরু করব।’
এর আগে আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুমের শিকার ইউপিডিএফের এ নেতা দায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে ট্রাইব্যুনালে আসেন। মাইকেল চাকমার সঙ্গে ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ও তার স্ত্রী অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে সাংগঠনিক কাজ শেষে ঢাকায় ফেরার পথে মাইকেল চাকমা গুমের শিকার হন।
এ প্রসঙ্গে মাইকেল চাকমা বলেছিলেন, রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে সাদা পোশাকধারী অন্তত সাত-আটজন আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তারা চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তোলে। আমি গাড়ির ভেতর একটি ওয়াকিটকি শনাক্ত করতে পেরেছিলাম। প্রথমে তারা আমাকে একটি কক্ষে আটকে রাখে এবং পরে আরও দুটি কক্ষে নিয়ে যায়, যেখানে নির্যাতন করা হয়। ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার খাগড়াছড়ির সমাবেশে অংশ নেওয়ার সময় কেন সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল, তারা আমাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।
মাইকেল চাকমা গুমের শিকার হলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তার সন্ধান দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানায়। হাইকোর্টে রিট করা হলেও তাকে উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিগত সরকার।
হাসিনা সরকারের পতনের পর দীর্ঘ পাঁচ বছর ৩ মাস পর গত ৭ আগস্ট অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্তি পান মাইকেল চাকমা। ওইদিন ভোরের দিকে চট্টগ্রামের একটি স্থানে তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়।