

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের একটি হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনী। রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে গত কয়েক দশক ধরে লড়াই করে আসা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) এই তথ্য জানিয়েছে।
তাদের দাবি, মিয়ানমার জান্তা ‘এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বিধ্বংসী বোমা’ দিয়ে হাসপাতালে হামলা করেছে। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী।
আরাকান আর্মি (এএ) বলেছে, জান্তার সামরিক বাহিনী রাখাইন প্রদেশের উপকূলীয় শহর রামরিতে আরও শক্তিশালী ও ধ্বংসাত্মক বোমা ফেলতে শুরু করেছে। এই হামলাকে শহরটিকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্তের অংশ হিসাবে বর্ণনা করেছে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি।
আরাকান আর্মি আরও বলেছে, গত মঙ্গলবার বিকেলে জান্তা বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় এই প্রদেশের শহর এবং এর আশপাশের অঞ্চলগুলোতে আরও শক্তিশালী বোমা ফেলতে শুরু করার পরে সেখানকার একটি সরকারি হাসপাতাল এবং শহরের মায়োমা বাজার ধ্বংস হয়ে যায়। এছাড়া বিমান হামলায় বেসামরিক ঘর-বাড়িও ধ্বংস হয়ে গেছে।
সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি বলেছে, জান্তা বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো গত মঙ্গলবার হামলার সময় ৫০০-পাউন্ড এবং অন্যান্য বোমা ফেলেছে। এসব বোমা পূর্বে ব্যবহৃত বোমাগুলোর চেয়ে বেশি ধ্বংসাত্মক ছিল। এছাড়া মঙ্গলবার সকালে শহরের ইন টাং ওয়ার্ডে জান্তা বাহিনীর তিনটি বিমান হামলায় বৌদ্ধ নানদের একটি কনভেন্টও ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রামরি শহরে আরাকান আর্মি এবং জান্তা সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর আগে আরাকান আর্মির সৈন্যরা শহরের দক্ষিণে অং চ্যান থার পাহাড়ের চূড়ার প্যাগোডায় অবস্থানরত সরকারি বাহিনীর সাথেও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
তারপর থেকে জান্তা বাহিনী এই শহরটিতে ঘন ঘন আকাশ, সমুদ্র এবং স্থল পথে বোমাবর্ষণ করে চলেছে। এছাড়া গত মঙ্গলবার রাখাইন প্রদেশের সরকারি বাহিনীর ঘাঁটিগুলো থেকে পোন্নাগিউন, রাথেদাউং ও বুথিদাউং শহর এবং প্রাদেশিক রাজধানী সিট্যুয়েতে শহর ও গ্রামের আবাসিক এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে।
আরাকান আর্মি বলেছে, আলাল সু নামে পোন্নাগিউন শহরের একটি সম্পূর্ণ আবাসিক ওয়ার্ড গত মঙ্গলবার ধ্বংস করে দেয় নিকটবর্তী পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থানরত শাসকগোষ্ঠীর সেনারা।
এছাড়া আরাকান আর্মি মঙ্গলবার মিনবিয়া টাউনশিপের কান নি গ্রামের কাছে জান্তা বাহিনী নবম কেন্দ্রীয় সামরিক প্রশিক্ষণ স্কুল দখল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত শনিবার থেকে গোষ্ঠীটি ওই ঘাঁটিতে হামলা চালাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিক থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স (পিডিএফ)। পিডিএফভুক্ত তিন গোষ্ঠী ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) এই সংঘাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই তিন গোষ্ঠী একত্রে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামেও পরিচিত।
প্রায় চার মাসের সংঘাতে মিয়ানমারের অন্তত ৪০টি শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ শান প্রদেশসহ অন্তত ৫টি প্রদেশ দখলে নিয়েছে পিডিএফ। সম্প্রতি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশ দখলের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে আরাকান আর্মি।
দ্য ইরাবতী বলছে, গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে রাখাইন প্রদেশে সামরিক অভিযান ব্যাপক জোরদার করে আরাকান আর্মি। এই গোষ্ঠীটি রাখাইন প্রদেশ এবং প্রতিবেশী চিন প্রদেশের ১৭০টিরও বেশি জান্তা ঘাঁটির পাশাপাশি ছয়টি শহরও দখল করেছে।
আরাকান আর্মি দেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় এই প্রদেশে তাদের অবশিষ্ট ঘাঁটিগুলোতে শাসক বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানিয়েছে। এএ বলছে, তারা শাসক বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ বাড়িয়ে তুলছে এবং যতক্ষণ না এসব ঘাঁটির সবই তাদের দখলে না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা হামলা থামাবে না।
এদিকে জান্তা বাহিনী প্রাদেশিক রাজধানী সিট্যুয়ে বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানা গেছে। মূলত আরাকান আর্মির সেনারা রাখাইনের এই রাজধানী শহরে আক্রমণ করতে প্রস্তুত। রাখাইনের মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, জান্তা বাহিনী শহরে প্রবেশের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরে প্রবেশের একমাত্র উপায় হলো ফ্লাইট। জান্তা বাহিনী ইয়াঙ্গুন থেকে সিট্যুয়েতে আসা ফ্লাইটের ৬০০ যাত্রীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলেও জানিয়েছে রাখাইনের মিডিয়া।