সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

রাশিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানভ গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের হাইকমান্ডের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ফোনালাপে হামাসকে তাদের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে রোব ও সোমবার হামাসের পাশপাশি পশ্চিম তীরে ক্ষমতাসীন স্বাধীনতাকামী জোট প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও), প্যালেস্টাইনিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন, পপুলার ফ্রন্ট ফর লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের নেতাদদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বোগদানভ।

ফিলিস্তিনের নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপে গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সেখানে যুদ্ধবিরতির পক্ষে রাশিয়ার দৃঢ় অবস্থানের কথাও উল্লেখ করেছেন এবং পিএলও’র প্রস্তাব অনুসারে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে রোববার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গাজার মানবিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলকে সেখানে পাঠানোর দাবি জানিয়েছিলেন।

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ প্রসঙ্গে রাশিয়ার অবস্থান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেছিলেন, হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলাকে কঠোরভাবে নিন্দনীয়, তবে সেই হামলার শাস্তি হিসেবে গাজায় টানা অভিযান এবং তার জেরে হাজার হাজার নিরপরাধ বেসামরিক ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ-শিশুর নিহত হওয়াও একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ১৬ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।

ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ১৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ১২ হাজারেরও বেশি।

অন্যদিকে, হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা।

দেড় মাসেরও বেশি সময় যুদ্ধের পর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নতি স্বীকার করে গত ২৫ নভেম্বর অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ এবং হামাস। গত নভেম্বরের মাঝামাঝি যুদ্ধের অন্যতম মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের মাধ্যমে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা বরাবর একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল হামাসের হাইকমান্ড।

সেই প্রস্তাবে গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ইসরায়েল যদি গাজা উপত্যকায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে, রাফাহ ক্রসিংয়ে অপেক্ষারত ত্রাণ, জ্বালানি ও মানবিক সহায়তা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে প্রবেশ করতে দেয় এবং ইসরায়েলি কারাগারগুলো থেকে অন্তত ১৫০ জন বন্দিকে মুক্তি দেয়, তাহলে নিজেদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে থেকে ৫০ জনকে ছেড়ে দেবে হামাস।

সেই প্রস্তাব মেনে নিয়ে ২৫ নভেম্বর চার দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। পরে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসর, ইউরোপ ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের তৎপরতায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও তিন দিন বাড়ানো হয়।

যুদ্ধবিরতির ৭ দিন ২৫-৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৯৪ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বিপরীতে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগার থেকে ১৮০ জনকে ছেড়ে দিয়েছে ইসরায়েলও।

১ ডিসেম্বর ভোর থেকে হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি।

 

 

সূত্র : রয়টার্স

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *