ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র এক দিন। তবুও ক্রেতারা এখনও পুরোদমে কোরবানির পশু কেনা শুরু করেননি। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে হাটে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে। যদিও কেনার চেয়ে তারা দরকষাকষি করছেন বেশি। আজ শনি ও পরদিন রোববার হবে মূল বেচাকেনা। বিক্রেতারা বলছেন, দরকষাকষির যে অবস্থা, গরুর ব্যাপারীদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে চাঁদ রাতে।

কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে দুই সিটি করপোরেশনে অস্থায়ী আর স্থায়ী পশুর হাট বসেছে ২০টি। গত বৃহস্পতিবার থেকে এসব হাটে আনুষ্ঠানিক পশু বিক্রি শুরু হলেও হাটে গরু-ছাগল আসা শুরু করেছে আরও চার থেকে পাঁচ দিন আগে থেকেই। বড়, মাঝারি, ছোট গরুসহ কোরবানির পর্যাপ্ত পশু আছে। তবে ক্রেতার সংখ্যা খুব কম। ক্রেতাদের দাবি, গরুর দাম তুলনামূলক বেশি। বাজেট অনুযায়ী ছোট ও মাঝারি গরু দামে মিলছে না। বিক্রেতাদের দাবি, গোখাদ্য চাল, ভুসি, গম, ডাল থেকে সবকিছুর দাম দ্বিগুণ, সে তুলনায় গরুর দাম বাড়েনি।

তিন মণ ওজনের গরু মণপ্রতি ৪০ হাজার টাকা আর পাঁচ মণ ওজনের গরু মণপ্রতি ৩৪ হাজার টাকা গড়ে বিক্রি হচ্ছে। আর ছাগলের দাম ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

গাবতলীতে শুক্রবার সকালেও ক্রেতার তেমন ভিড় দেখা যায়নি। তবে জুমার নামাজের পর অনেকে গরু দেখতে এসেছেন। হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটের প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকতেই বড় গরু চোখে পড়বে। মাঝারি গরু মিলবে হাটের মাঝে। তবে ছোট গরু খুঁজতে হলে যেতে হবে গাবতলী হাটের শেষ দিকে। হাটে সব আকারের গরু আছে। তবে বেশি উঠেছে মাঝারি ও বড় গরু। হাটে ক্রেতার চেয়ে গরুর সংখ্যা বেশি।

মিরপুর ১২ নম্বর থেকে হাটে এসেছেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, দুই ঘণ্টা ধরে মাঝারি আকারের গরু খুঁজছি। বাজেট অনুযায়ী গরু পাচ্ছি না। ব্যাপারীরা দাম বেশি চাচ্ছে। গতবারের তুলনায় এবার ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি দাম চাইছে।

নাটোর থেকে গাবতলী হাটে ছয়টি গরু এনেছেন ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে এসেছি হাটে। এখন পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি। আমার গরুগুলো মাঝারি আকারের, ওজনে ৩ মণের আশপাশে। গরুর দাম ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে। ক্রেতারা ১ লাখ ১০ হাজার টাকার বেশি বলছে না।

রাজধানীর কমলাপুর পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, কমলাপুর শেরেবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে ইত্তেফাক মোড়, স্টেডিয়াম এলাকা, মানিকনগর ধলপুর সিটি পল্লী পর্যন্ত সারি সারি গরু বাঁধা। বৃষ্টি, বালি আর গোবরে পুরো হাট কর্দমাক্ত। সিরাজগঞ্জ থেকে কমলাপুর হাটে ১৭টি দেশি গুরু এনেছেন মাহবুবুল আলম। এসব গরুর প্রতিটির ওজন ৪ থেকে ৬ মণ পর্যন্ত। ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম চাচ্ছেন তিনি। কিন্তু ক্রেতারা ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বলছেন।

শাহজাহানপুর হাটে গতকাল সন্ধ্যায় ঘুরে দেখা যায়, বিকেলের চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। তবে তাদের অনেকেই গরুর দাম বেশির অভিযোগ করছেন। মালিবাগের নিয়াজ আলম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, কোরবানি ত্যাগের প্রতীক। দাম বেশি হলেও কিনতেই হবে। কিন্তু বাসায় গরু রাখার জায়গা নেই। বাড়িওয়ালা বলে দিয়েছেন, কোরবানির এক দিন আগে ছাড়া যেন গরু না আনা হয়। তাই বাজারে এসে দরদাম করছি।

শাহজাহানপুর হাটে গরুর পাশাপাশি ছাগলও বিক্রি হচ্ছে। ব্যাপারীদের দাবি, হাটে ৮ হাজার টাকায় যেসব ছাগল বিক্রি হচ্ছে, সেগুলোর মাংস হবে আনুমানিক সাত কেজি। অন্যদিকে দেড় লাখ টাকার দেশি বড় ছাগলের ১০০ কেজি মাংস হবে। এ ছাড়া আকার ভেদে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা দরে ছাগল বিক্রি হচ্ছে।

বাসাবো থেকে শাহজাহানপুরে হাটে ছাগল কিনতে এসেছেন আরাফাত। তিনি বলেন, ছাগলের অনেক বেশি দাম চাচ্ছে বিক্রেতারা। ১০ কেজি ওজন হবে না দাম চায় ২০ হাজার টাকা। সেই ছাগল ১২ হাজার টাকায় নিয়েছি।

হাজারীবাগের পশুর হাটের ইজারাদার মুহাম্মদ আবুল হাসনাত বলেন, ক্রেতারা হাটে এসে এখনও দরকষাকষি করছেন। এবার গরুর দাম তুলনামূলক বেশি। কিন্তু গত বছর ঈদের আগের দিন যেমন গরুর দাম পড়ে গিয়েছিল, সেটি এবার হবে না বলে

মনে হচ্ছে।

 

 

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...