এখন থেকে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পর্ষদ সভায় পরিচালকদের অবশ্যই স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। ২০২০ সালের মার্চে কভিড-১৯ সৃষ্ট দুর্যোগের সময় ‘হাইব্রিড’ পদ্ধতিতে পর্ষদ সভায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কভিড পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার পরও পদ্ধতিটি বাতিল করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে, হাইব্রিড পদ্ধতিতে সভা অনুষ্ঠানের সুযোগ বাতিল করে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হাইব্রিড পর্ষদ সভার সুযোগ নিয়ে বেশ আগে থেকেই প্রভাবশালী কিছু পরিচালক ও চেয়ারম্যান বিদেশ থেকে ব্যাংকের পর্ষদ সভায় অংশ নিচ্ছিলেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সরকারি-বেসরকারি অনেক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক বিদেশে পালিয়েছেন। ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে থাকা অনেক রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে গ্রেফতার এড়াতে গোপন স্থানে থেকে অনেকে ব্যাংকের পর্ষদ সভায় অংশ নিচ্ছেন। পালিয়ে যাওয়া পরিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ আছে। এ প্রেক্ষিতেই হাইব্রিড পদ্ধতির পর্ষদ সভা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২৩ মার্চ ২০২০, ১৭ মে ২০২০, ৩০ জুন ২০২০ এবং ২৬ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে জারিকৃত যথাক্রমে বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-০৯, ২৬, ৩৪ এবং ১২ এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে। উল্লিখিত সার্কুলার লেটারগুলোর মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে এবং পরবর্তীতে ব্যাংকের ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, নির্বাহী কমিটি, অডিট কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাসহ বিভিন্ন সভা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবং হাইব্রিড পদ্ধতিতে (কিছুসংখ্যক সদস্য সভায় সরাসরি অংশগ্রহণ ও অবশিষ্ট সদস্য ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে) অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল। বর্তমানে দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসায় এবং দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ব্যাংকের নিয়মিত কার্যক্রম যথাযথভাবে চলমান রাখার লক্ষ্যে উপরোক্ত সার্কুলার লেটারগুলো এতদ্বারা বাতিল করা হলো।
তবে শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন নয় এমন ব্যাংকের বিদেশী পরিচালকরা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও পর্ষদের সহায়ক কমিটিগুলোর সভায় অনলাইনে যুক্ত থেকে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলো, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
প্রসঙ্গত, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো পরিচালক ব্যাংকের পরপর তিনটি পর্ষদ সভায় অংশ না নিলে তিনি পরিচালক পদ হারাবেন। আবার কোনো পরিচালক বিদেশে অন্যূন ৩ মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করলে ব্যাংকের পর্ষদ তার বিকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে পারবে।