নভেম্বর ২২, ২০২৪

চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীরের ১২তম প্রয়াণ ছিল গতকাল । ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের জোকায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন বাংলাদেশের বরেণ্য চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, চলচ্চিত্রগ্রাহক, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ তিনজন চলচ্চিত্রকর্মী।

তারেক মাসুদের জন্ম ১৯৫৬ সালে ফরিদপুর জেলার ভাঙা উপজেলার নূরপুর গ্রামে। মাদ্রাসা থেকে তিনি মৌলানা পাশ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার মাদ্রাসায় পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটে। এরপর তিনি ভাঙা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইতিহাস বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

আশির দশকে শুরু হয় তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র জীবন। তার নির্মিত প্রথম প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৯ সালে। প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের জীবন নিয়ে এই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন তিনি। এরপর তিনি আরও কিছু প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে ব্যাপক প্রশংসিত হন এবং অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও।

তারেক মাসুদ নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’। এটি মুক্তি পায় ২০০২ সালে। চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে। এটি বিশ্বখ্যাত কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং এর জন্য তারেক মাসুদ সম্মাননা পান। এছাড়া চলচ্চিত্রটি অস্কারেও গিয়েছিল।

এরপর তারেক মাসুদ নির্মাণ করেন ‘অন্তর্যাত্রা’ ও ‘রানওয়ে’ সিনেমা দুটি। এগুলোতেও তার নিজস্বতা ফুটে উঠেছিল দারুণভাবে।

অন্যদিকে, ক্যামেরা ‘ডিরেক্টর’ হিসেবে কাজ করে যেসব বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পেয়েছেন, তাদের মধ্যে আশফাক মিশুক মুনীর ছিলেন অন্যতম। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে আশফাক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিবিসির ভিডিও গ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। সবার কাছে মিশুক মুনীর নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’র প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন তিনি।

নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে তাদের দু’জনকে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করে সরকার।

বাঙালির আত্মপরিচয়ের সব দিক তুলে ধরে তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র। তিনি অকালপ্রয়াত না হলে দেশের চলচ্চিত্র আরও সমৃদ্ধ হতো। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের পরম্পরা রক্ষা করতে হলে তারেক মাসুদসহ খ্যাতিমান অন্যান্য চলচ্চিত্রকারের ভাব–ভাবনাকে পাঠ্যপুস্তকে স্থান দিতে হবে।

তারেক মাসুদের ১২তম প্রয়াণদিবস উপলক্ষে স্মরণসভা ও স্মারক বক্তৃতায় উঠে এল এসব কথা। রোববার জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে তারেক মাসুদ স্মরণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি।

আলোচনার আগে প্রদর্শিত হয় শিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে তারেক মাসুদ নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন চলচ্চিত্র–গবেষক ফাহমিদুল হক। ‘আত্মপরিচয়ের রাজনীতি ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র’ শীর্ষক প্রবন্ধে দেশের চলচ্চিত্রের ধরন সম্পর্কে আলোচনা করেন তিনি।

ফাহমিদুল হক বলেন, বাঙালিত্ব, মুসলমানিত্ব, জনধর্ম ও রূপান্তর—এই চার ভাগে দেখতে হবে চলচ্চিত্রকে। এর মধ্যে প্রথম তিন ধরন পাওয়া যাবে তারেক মাসুদ নির্মিত ‘মাটির ময়না’ চলচ্চিত্রে।

প্রবন্ধ পাঠ ছাড়াও ফাহমিদুল হক ব্যক্তি তারেক মাসুদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও দর্শনগত মনোভাব নিয়ে আলোচনা করেন। উঠে আসে সক্রিয় চলচ্চিত্রকারের মতাদর্শিক বিবর্তন ও সক্রিয় থাকার কথা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি তত্ত্ব ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর বক্তব্যে এসেছে ‘লালসালু’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘খেলাঘর’, ‘মেহেরজান’সহ ১০টি চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গ।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...