জুন ২৯, ২০২৪

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সোনার অলংকার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আরোপিত ৫ শতাংশ ভ্যাট হার কমিয়ে ৩ শতাংশ করা সহ ১৫টি প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। কর হার কমানো হলে ক্রেতারা ভ্যাট দিতে আগ্রহী হবেন। পাশাপাশি জুয়েলারি খাত থেকে প্রায় এজ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব হবে।

অাজ রোববার (৯ জুন) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রস্তাব তুলে ধরেন বাজুসের নেতারা।

এদিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়, বাজুসের মুখপাত্র ও সাবেক সভাপতি এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. দিলীপ কুমার রায়, বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, বাজুসের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান, বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান ও কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশনের সদস্য সচিব ও কার্যনির্বাহী সদস্য পবন কুমার আগরওয়াল।
বাজুসের নেতারা বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেট জুয়েলারি শিল্পের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এনবিআরের পক্ষ থেকে প্রাক-বাজেট বৈঠকগুলোতে ব্যবসায়ীদের সমস্যা ও দাবি পূরণে দফায় দফায় আশ্বাস দেওয়া হলেও, প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন নেই। বারবার বৈধ পথে সোনার বার, কয়েন ও সোনার অলংকার তৈরি ও রপ্তানিতে উৎসাহ প্রদান করা হবে বলা হলেও, এই খাত সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানীর উপর অসম শুল্ক হারের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে স্থানীয় পর্যায়ে জুয়েলারি অংলকার বিক্রির ওপর রয়েছে ৫ শতাংশ ভ্যাট। ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে অপরিকল্পিত উৎসে কর হারের বোঝা। এভাবে অপরিকল্পিত আমদানী শুল্ক-কর হার, শুল্ক-কর এবং কাঠামোগত শুল্ক ও শিল্পবান্ধব নীতি প্রণয়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদাসীনতা জুয়েলারি শিল্পকে পিছিয়ে দিয়েছে।

সংগঠনটির নেতারা আরও বলেন, ব্যাগেজ রুল সংশোধন করার মাধ্যমে স্বর্ণের বার ও রূপার বার আনা বন্ধ করতে হবে। কারণ ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিয়ে অবাধে সোনার বার বা পিন্ড বিদেশ থেকে দেশে প্রবেশ করছে। চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। যদিও প্রকৃত অর্থে সোনা চোরাচালান বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি প্রস্তাবিত বাজেটে।

এ পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট চুড়ান্ত করার ক্ষেত্রে ১৫টি প্রস্তাব পুনঃবিবেচনার দাবি জানিয়েছে বাজুস। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. সোনার অলংকার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ভ্যাট হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা দরকার। এতে সোনা খাত থেকে সরকার প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে পারবে।

২. নিবন্ধনকৃত সকল জুয়েলারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যতো দ্রুত সম্ভব ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস (ইএফডি) বিতরণ করতে হবে।

৩. অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক এর ক্ষেত্রে আরোপিত সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্তসাপেক্ষে আইআরসি ধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের ক্ষেত্রে পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধুমাত্র জুয়েলারি খাতের জন্য রেয়াতি হারে এক শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে।

৪. আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণের ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসি ধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্ক হার ৫ শতাংশ করা হোক।

৫. সোনা পরিশোধানাগার শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সোনার বর্জ্য ব্যবহারের জন্য শুল্ক হার কমাতে হবে।

৬. হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাত করণের উদ্দেশ্যে যথাযথ কতৃপক্ষ কতৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানিকৃত রাফ ডায়মন্ডের প্রস্তাবিত শুল্ক হার নির্ধারণ করতে হবে।

৭. বহিঃর্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের জুয়েলারি শিল্পের আধুনিকায়ন প্রয়োজন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও Lab Grown Diamond এর বাজার বিস্তার লাভ করছে। বর্তমানে ভারতে Lab Grown Diamond এর বাজার প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা সম পরিমাণের এবং দিন দিন এই অংক বেড়ে যাচ্ছে। তাই বাজুস ল্যাব গ্রোন ডায়মন্ডের এইচ.এস কোড (৭১০৪.২১.১০) অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি প্রস্তাবিত শুল্ক হার নির্ধারণ করা হোক।

৮. বৈধ পথে মসৃন হীরা আমদানীতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানীকৃত মসৃন হীরায় ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করার শর্তে প্রস্তাবিত শুল্ক হার নির্ধারণ করা হোক।

৯. আয়কর প্রস্তাবনা বা ট্যাক্স আইন ৪৬-(বিবি) (২) ধারার অধীনে স্বর্ণ পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ ট্যাক্স হলিডে প্রদানের প্রস্তাব করা হলো।

১০. সোনার অলংকার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সকল প্রকার শুল্ক কর অব্যাহতি প্রদান সহ ১০ বছরের ট্যাক্স হলিডে প্রদানের প্রস্তাব করা হলো।

১১. আয়কর আইন, ২০২৩ এর ১৪০ (৩) (ক) ধারা অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনের দায়িত্ব প্রাপ্ত “নির্দিষ্ট ব্যক্তি” এর আওতায় দেশের জুয়েলারি শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কর-অব্যাহতি প্রদানের দাবি জানাচ্ছে বাজুস।

১২. ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত-২০২১)’ এর ৮.২ উপধারার অনুসারে ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে পর্যটক কর্তৃক সোনার বার আনা বন্ধ করা এবং ট্যাক্স ফ্রী সোনার অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রামের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম করার প্রস্তাবনা করা হচ্ছে।

১৩. বৈধভাবে সোনার বার, সোনার অলংকার, সোনার কয়েন রপ্তানিতে উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করা শর্তে রপ্তানিকারকদের মোট মূল্য সংযোজনের ৫০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করছি।

১৪. এইচ.এস কোড ভিত্তিক অস্বাভাবিক শুল্ক হার সমূহ হ্রাস করে পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে শুল্ক হার সমন্বয় করা সহ এসআরও সুবিধা প্রদান করা হোক।

১৫. মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০২২ ধারা-১২৬ক অর্থ আইন, ২০১৯ (২০১৯ সালের ১০নং আইন) এর ১০২ ধারাবলে, চোরাচালান প্রতিরোধ করতে গিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমূহের উদ্ধারকৃত সোনার মোট পরিমানের ২৫ শতাংশ উদ্ধারকারী সংস্থা সমূহের সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে প্রদানের প্রস্তাব করেছে বাজুস।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *