কিছুটা ঊর্ধ্বমুখীতার মধ্য দিয়ে গেলো সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে, তার থেকে প্রায় ৫ গুণ দাম বেড়েছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বড় অঙ্কে বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে মূল্য সূচক ছিল মিশ্র।
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন আড়াই হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। সেই সঙ্গে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ১১ শতাংশের বেশি। আর ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে দশমিক ৩৯ শতাংশ।
এদিকে, দাম বাড়ার তালিকা বড় হলেও গত কয়েক মাসের মতো তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা সংকট ছিল গত সপ্তাহজুড়েও। ফলে প্রায় দুইশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
এমন বাজারে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বা দশমিক ৩৪ শতাংশ। বাজার মূলধন বাড়ার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মেলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।
এদিকে, সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১১৮টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩টির। আর ১৯৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২৪ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৯ শতাংশ। এর মাধ্যমে টানা চার সপ্তাহ ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বাড়লো। আগের সপ্তাহে সূচক বাড়ে ৬ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা দশমিক ১০ শতাংশ। তার আগের দুই সপ্তাহে বাড়ে ১৫ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বা দশমিক ২৫ শতাংশ এবং ৩৯ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৬২ শতাংশ।
প্রধান মূল্য সূচক বাড়লেও বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে। গেল সপ্তাহজুড়ে সূচক কমেছে দশমিক ২৪ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচক বাড়ে ৫ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বা দশমিক ২৫ শতাংশ।
তবে প্রধান মূল্য সূচকের মতো ইসলামী শরিয়াহভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকও টানা চার সপ্তাহ বেড়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি বেড়েছে ৩ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৪ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৩০ শতাংশ। তার আগের দুই সপ্তাহে বাড়ে ২ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বা দশমিক ১৮ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৫ শতাংশ।
প্রধান মূল্য সূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৯৪৭ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৮৫১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৯৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ।
আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৭৩৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৪৭৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩১০ কোটি ৬৭ লাখ ২ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আরডি ফুডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭৬ কোটি ৮০ লাখ ৬২ হাজার টাকা। ১৫১ কোটি ১৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ।
এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে, লুব-রেফ বাংলাদেশ, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, ওরিয়ন ইনফিউশন, মিডল্যান্ড ব্যাংক এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ।