কিছু মানুষের কথা ‘চুকুকেই শান্তি’ । এই কথা শুনলে চায়ের কথাই মাথায় আসে। আমাদের মধ্য অনেকেই আছেন যাদের এক কাপ চা না খেলে সকালের ঘুমই ভাঙতে চায় না। সকাল হোক কিংবা বিকেল, কারও কারও আবার কয়েক ঘণ্টা অন্তর অন্তর চা খাওয়ার জন্য মনটা আনচান করে। ব্রেকফাস্ট হোক বা টিফিন টাইম, কাজের ফাঁকে, ক্লান্তি দূর করতে, আড্ডার মাঝে আর কিছু থাক না বা না থাক ১-২ কাপ চা ছাড়া যেন ঠিকঠাক জমে না। কেউ দুধ চা খেতে পছন্দ করেন তো কেউ লিকার চা। বিশেষজ্ঞদের মতে কোন কিছু্ই অতিরিক্ত খাওয়া কখনো্ই ভালো নয়। জেনে নেওয়া যাক চা পানের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে-
চায়ের উপকারিতা
চায়ের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনেসিস (Camellia sinensis)। এটিতে অনেক ঔষধি উপাদান রয়েছে, যা ক্যানসার, হৃদরোগ, বাত এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
ক্যানসার প্রতিরোধ
আশ্চর্যজনকভাবে চা ক্যানসারের মতো জটিল রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। আসলে চায়ে পলিফেনল যৌগের মতো কিছু ম্যাজিক উপাদান পাওয়া যায়, যা টিউমার কোষগুলোকে পার্শ্ববর্তী অংশে ছড়িয়ে পড়তে বাধা দেয় এবং কোষের সঠিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও গ্রিন টি এবং ব্ল্যাক টিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ফ্ল্যাওনয়েডস (অ্যাপিকেচিন, এপিগেলোটেকিন, এপিকেটচিন গ্যালেট) – এর কেমোপ্রেনভেটিভ বা অ্যান্টিক্যানসার প্রভাবগুলো ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করে।
বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণ
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির জয়েন্টগুলিতে ব্যথা, কড়া এবং ফোলাভাব অব্যাহত থাকে। গ্রিন টি এই সমস্যাটিতে সাময়িক আরাম দিতে পারে। এনসিবিআই-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, গ্রিন টি এবং ব্ল্যাক টিতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা বাতের ঝুঁকি এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং গ্রিন টিকে বাতের ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে মেনে নেওয়া যেতে পারে।
হৃদরোগ প্রতিরোধ
হৃৎপিন্ডকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত সুষম পরিমাণ গ্রিন টি বা ব্ল্যাক টি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেক বিশেষজ্ঞরা। নিয়মিত চা খাওয়ার অভ্যাস রক্তে শর্করার পরিমাণ, রক্তচাপ, লিপিড কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণে রাখে। চা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। তবে এই মুহুর্তে হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধে চায়ের ভূমিকা নিয়ে আরও বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রয়োজন।
মাথা ব্যাথা কমাতে
এক কাপ চা ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি মাথা ব্যাথাও কমিয়ে দিতে পারে ম্যাজিকের মতো। আসলে এতে ক্যাফিন সামগ্রী রয়েছে, যা মাথা ব্যথার প্রভাবকে হ্রাস করতে পারে। তবে বিভিন্ন কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে। ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী এবং অত্যন্ত বেশী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
ডায়াবেটিস কমাতে
ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চায়ের বিভিন্ন উপকারী বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, চা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণা অনুসারে, চা ইনসুলিনের সক্রিয়তা বাড়ায় যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত চা খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মনে রাখবেন, দিনে ২ থেকে ৩ কাপের বেশি চা খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত মাত্রায় চা খেলে নিম্নলিখিত শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে –
উদ্বেগ এবং স্ট্রেস তৈরি করতে পারে: চায়ের মধ্যে ক্যাফিন থাকে এবং অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফিন গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। অতিরিক্ত চা খেলে উদ্বেগ, অস্বস্তি এবং স্ট্রেস বাড়তে পারে।
আয়রনের শোষণ হ্রাস করে: চায়ে ট্যানিন নামে একটি যৌগ পাওয়া যায়। এটি শরীরের আয়রন গ্রহণ করার ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।
বমি বমি ভাব : চা এবং গ্রিন টিতে ক্যাফিন থাকে, যার কারণে অত্যধিক পরিমাণে চা খেলে বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
অনিদ্রা ও হৃদরোগের কারণ হতে পারে: চা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করলেও বেশি পরিমাণে ক্যাফিন গ্রহণের ফলে অনিদ্রা এবং বিভিন্ন রকমের কার্ডিওভাসকুলার রোগ অর্থাৎ হৃৎপিন্ডের কার্যকারীতায় বিভিন্ন রকমের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
বুক জ্বালা হতে পারে: চায়ের মধ্যে ক্যাফিন রয়েছে। এ ছাড়া বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকেও প্রমাণিত হয়েছে যে ক্যাফিন পেটে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে পারে, যার ফলে বুক ও পেট জ্বালার মত বিভিন্ন রকমের গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
গর্ভাবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে: গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে চা খেলে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফিনের প্রভাবে গর্ভপাতের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে এবং জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হতে পারে।