ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

সুস্থতা আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে কত বড় নেয়ামত। অথচ আমরা এ নেয়ামতের কদর করি না। আমরা যদি এ নেয়ামতের মূল্যায়ন না করি তাহলে আল্লাহতায়ালার হক আদায় থেকেও যেমন বঞ্চিত থাকব তেমনি বঞ্চিত থাকব বান্দার প্রাপ্য প্রদানের ক্ষেত্রেও।

আমার স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে তাহলে আমি কোনো কিছুরই যোগ্য হব না। আর তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক বা বাহ্যিক কাজকর্মই হোক না কেন। তাই ইসলামে স্বাস্থ্যের প্রতি দৃষ্টি রাখার বিষয়ে অত্যধিক তাকিদ প্রদান করা হয়েছে। কেননা, আল্লাহপাক মানুষ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য আর ইবাদতের জন্য শারীরিক শক্তি সুস্থতা প্রয়োজন।

একজন সুস্থ মানুষই পারে সঠিকভাবে ইবাদত করতে। আমাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে আমাদের শরীরের প্রতি যত্নবান হতে হবে। শরীরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি শরীরচর্চাও করতে হবে।

মহানবিও (সা.) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন স্থানে তার উম্মতকে নসিহত করেছেন। হজরত আবু মালেক আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবি (সা.) বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অর্ধেক’ (মুসলিম)।

পরিচ্ছন্নতাকে ইসলামে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা অন্য কোনো ধর্মে এরূপ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ইসলামে ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা, গৃহের পরিচ্ছন্নতা ও চারপাশের পরিচ্ছন্নতা, রাস্তা-ঘাটের পরিচ্ছন্নতাসহ এমন কোনো দিক নেই যা থেকে বাদ পড়েছে।

এই যে পরিচ্ছন্নতার ওপর ইসলাম গুরুত্বারোপ করেছে এর কারণ কি? এর মূল কারণ হলো, আমরা যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকি তাহলে আমরা সুস্থ থাকব, আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। বেশিরভাগ রোগব্যাধি শরীরের দানা বাঁধে একমাত্র অপরিচ্ছন্নতার কারণে।

অনেকে আছে নিয়মিত গোসল করে না, ঠিকমতো দাঁত ব্রাশ করে না, এর ফলে কী হয়, এতে শরীরে আস্তে আস্তে বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট রোগ দেখা দেয়, আর এ ছোট ছোট রোগগুলোই একদিন বড় আকার ধারণ করে। যদিও সুস্থ থাকার জন্য আমাদের চেষ্টার কোনো অন্ত নেই।

পৃথিবীতে সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপনের জন্য আমাদের কত আকুতি, কত পরিশ্রম, কত সাধনা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যে পথে সুস্থ থাকা যায় তার সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করার কারণে আজ বিশ্বে এমনসব রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে, যেগুলো থেকে পরিত্রাণের আর কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জীবনের বড় একটি সম্পদ সুস্থতা। সময় থাকতে এর যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।

আমরা যেন অসুস্থতার আগেই নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি দৃষ্টি রাখি এ বিষয়ে মহানবি (সা.) বলেন, ‘হে আমার উম্মত, পাঁচটি সম্পদ হারানোর আগে তার মর্যাদা দাও। ১. মারা যাওয়ার আগেই তোমার জীবনের প্রতি মুহূর্তকে কাজে লাগাও। ২. বুড়ো হওয়ার আগে যৌবনকে কাজে লাগাও। ৩. দারিদ্র্যের আগে সচ্ছলতার মূল্য দাও। ৪. অসুস্থতার আগে স্বাস্থ্যকে মূল্য দাও। ৫. ব্যস্ততার আগে অবসরকে কাজে লাগাও’ (মুসতাদরিকে হাকেম)। মহানবি (সা.) আমাদের অসুস্থ হওয়ার আগে স্বাস্থ্যকে সৎ কাজে ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্যকে কাজে লাগাও, স্বাস্থ্যকে রক্ষা কর।

আল্লাহর নবি তার এক সাহাবিকে যিনি সারা দিন রোজা রাখেন, সারা রাত নফল নামাজ পড়েন, তাকে ডেকে বললেন, হে আমার সাহাবি, জেনে রাখ, ‘নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার শরীরের হক রয়েছে’ (বোখারি)। এ থেকে বোঝা যায়, ইসলাম এমন কিছু করতে বলে না যা থেকে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। আমরা যদি সব কিছু ভুলে গিয়ে কেবল দিন-রাত ইবাদতে মগ্ন থাকি আর শরীরের প্রতি, ঘর-সংসারের প্রতি, স্ত্রী-সন্তানের প্রতি খেয়াল না রাখি তবে কী মহান আল্লাহপাক সন্তুষ্ট হবেন? মোটেও না।

আমাদেরকে ইবাদত, ঘর-সংসার সব কিছুই করতে হবে এবং স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। সুস্বাস্থ্য মূল্যবান সম্পদ। শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক স্বস্তির ওপরই একাগ্রচিত্তে ইবাদত নির্ভরশীল।

হাদিসে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যেমন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। মহানবি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘অধিকাংশ মানুষ আল্লাহপাকের দুটি বিশেষ নেয়ামত সম্পর্কে খুবই অমনোযোগী। একটি হলো স্বাস্থ্য আর অপরটি হলো অবসর’ (বোখারি ও তিরমিজি)।

মহানবি (সা.) আরেক হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘দুর্বল মুমিনের চেয়ে শক্তিশালী মুমিন উত্তম এবং আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়’ (সহিহ মুসলিম)।

ইসলামের দৃষ্টিতে, অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করার চেয়ে সুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উত্তম। মহানবি (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দাকে নেয়ামত সম্পর্কে প্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে তা হলো তার সুস্থতা সম্পর্কে। তাকে বলা হবে আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দেইনি?’ (সুনানে তিরমিজি)।

তাই আসুন, আল্লাহপাকের এ নেয়ামতকে উপলব্ধি করে আল্লাহতায়ালার শুকরিয়া আদায় করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করুন, আমিন।

লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...