পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া বনে লাগা আগুন এখনো নেভেনি। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট গেলেও কাজ শুরু করবে রোববার সকাল থেকে। রাত হয়ে যাওয়ায় বনবিভাগও তাদের কাজ বন্ধ রেখেছে।
রোববার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস, বনবিভাগ ও স্থানীয়রা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করবেন বলে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান।
তিনিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
রাতে নুরুল করিম সাংবাদিকদের জানান, শনিবার দুপুরে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া এলাকায় আগুনের কুণ্ডলী দিয়ে ধোঁয়া উড়তে দেখেন বনকর্মী ও স্থানীয় গ্রামবাসী। তখন থেকে তারা ভোলা নদী থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।
তারা দুপুর থেকে সন্ধ্যায় পর্যন্ত যেসব স্থানে আগুনের কুণ্ডলী ও ধোঁয়া দেখতে পেয়েছে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পানি ছিটিয়ে নেভানোর চেষ্টা করেছে। এখন আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট পৌঁছেছে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “এই আগুনের খুববেশি ক্ষতি হয়নি। এই আগুনে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
“সুন্দরবনে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত, আগুনে বনের কোনো প্রজাতির গাছপালা পুড়ছে এবং কী পরিমান এলাকায় আগুনে বিস্তৃতি লাভ করেছে তা পড়ে বলতে পারব। আগে বনের আগুনটা নেভাতে হবে। পরে তদন্ত কমিটি দেওয়া হবে। কমিটি তদন্ত করে বিস্তারিত জানাবে।”
এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আগুনের বিস্তৃতি লাভ করেছে বলে জানা গেছে।
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে সুন্দরবন সংলগ্ন মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম রাতে এই প্রতিবেদককে বলেন, “শনিবার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আমুরবুনিয়া গ্রামের লোকজন বনের ভেতরে আগুনের ধোঁয়া দেখতে পায়। তখন ওই গ্রামের দেড় থেকে দুইশ গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে বাড়ি থেকে পানির কলস নিয়ে বনের আগুন লাগার স্থানে যায়। সেখানে গিয়ে তারা ভোলা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে যেখানে আগুনের ধোঁয়া ও কুণ্ডলী দেখতে পেয়েছে সেখানেই পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে। সুন্দরবনের আমুরবুনিয়া এলাকায় লাগা আগুন এক থেকে দেড় কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। দেড় কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থানে আগুনের ধোঁয়া ও কুণ্ডলী আমি দেখতে পেয়েছি। এই আগুন নেভাতে সময় লাগবে।
“রোববার সকাল থেকে আমুরবুনিয়া গ্রামের অন্তত তিনশত গ্রামবাসী আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেবে। বন আমাদের সম্পদ, এই বনকে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। যত তাড়াতাড়ি পারি আমরা আগুন নিভিয়ে ফেলব।”
আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে লাইন অব ফায়ার কেটে দেওয়ার পরামর্শ অভিজ্ঞদের।
তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির বাগেরহাট জেলা শাখার সদস্যসচিব ফররুফ হাসান জুয়েল বলেন, “এর আগেও এই এলাকার বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। সুন্দরবনের আগুন সব সময় মাটির নিচ থেকে ছুটে। গ্রীষ্ম মৌসুমে বনের গাছের পাতা শুকিয়ে মাটিতে পড়ে থাকে। এই পাতা পচে এক ধরনের মিথেন গ্যাসের সৃষ্টি হয়। এই গ্যাস অনেক সময় রোদের তাপে আপনা আপনি জ্বলে ওঠে। আবার অনেক সময় বনের ভেতরে আসা মৌয়াল বা স্থানীয় লোকজন তাদের ব্যবহৃত আগুন অসাবধানতাবশত যেখানে-সেখানে ফেলে দেয় তার থেকেও আগুনের সূত্রপাত হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিগত দিনে যখন বনে আগুন লেগেছে তখন আমি দেখেছি, আগুনের বিস্তৃতি যাতে নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য মাটি কেটে (লাইন অব ফায়ার) এলাকা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।”
এবারের লাগা আগুনের যে বিস্তৃতি দেখা যাচ্ছে, তাতে আগের ওই পদ্ধতি অনুসরণ করলে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন এই নেতা।