

বর্ধিত উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে প্রতিকূল অবস্থা থাকায় দেশের বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর সম্পূর্ন বাদ দিয়ে ০ শতাংশ করার প্রস্তাব জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্টি (সিএমসিসিআই)।
বৃহস্পতিবার (০৬ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী কর্তৃক প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় এক সিএমসিসিআইএর পক্ষ এ প্রস্থাব তুলে ধরেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট খলিলুর রহমান।
তিনি বলেন, যেহেতু, বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা, তাই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধি, ডলার সংকট এবং দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় মূল্য স্ফীতি ১০ এর কোঠায় উঠে গেছে, বর্ধিত উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে সেহেতু পোশাক শিল্পের উৎসে কর বাতিলের প্রস্তাব করছি।
খলিলুর রহমান বলেন, করোনা মহামারি থেকে শুরু করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দায় নানা মূখী অর্থনীতি চাপের মুখেও দেশের অর্থনীতিকে চলমান রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম এবং নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী কর্তৃক ”সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার” শিরোনামে দেশের উন্নয়নে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার চ্যালেঞ্জিং বাজেট প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও অর্র্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ ধরনের বাজেট প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সময়ে যথোপযুক্ত এবং সাহসী পদক্ষেপ হলেও তা বাস্তবায়নে যথাযথ তদারকি এবং নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কে রাজস্ব আহরনের জন্য ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার যে লক্ষ্য মাত্রা দেওয়া হয়েছে তার যথাযথ তদারকি এবং সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা না গেলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে। বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ বরাদ্দ কমানোর ফলে জনগনের জীবনাযাত্রার খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে।
সিএমসিসিআইয়ের এই প্রেসিডেন্ট বলেন নিয়মিত কর প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর করের বোঝা না বাড়িয়ে নতুন করদাতা সৃষ্টির উপর গুরুত্ব প্রদান সহ পরিবহন ও যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। করদাতাদের হয়রানি কমাতে আয়কর রিটার্ন অ্যাসেসমেন্টের বিধান বাতিল করায় ব্যক্তি ও কোম্পানি দুই শ্রেণির করদাতাই কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে।
কাস্টম আইন ২০২৩ বিষয়ে তিনি বলেন, উক্ত আইনে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। যার মধ্যে কাস্টম অ্যাক্ট ১৯৬৯ এর ৩২ ধারায় সৎ ও ব্যবসায়ীদের রক্ষায় ভুল এবং অসত্য ঘোষনা উভয়ের মধ্যে ১০০০ টাকা শুল্ক ব্যবধানে যে মান দন্ডটি ছিল কাস্টম আইন ২০২৩ এর ৩৩ ধারায় তা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত বিপদে পড়বে সৎ ব্যবসায়ীবৃন্দ। কাস্টমস্ অফিসারের করুনায় থাকতে হবে। যার ফলে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই উক্ত ৩৩ ধারা বাতিল করে কাস্টম অ্যাক্ট ১৯৬৯ এর পূর্নবহাল করার অনুরোধ করছি।
খলিলুর রহমান বলেন, কাস্টম আইন ২০২৩ এর ৮২ ধারায় আমদানি কারকের কোন ভুল বা আমদানি দলিলে কোন গড়মিল থাকিলে সিএন্ডএফ এজেন্টকেও দায়ি করা হবে বলে উক্ত ৮২ ধারায় এরুপ লিখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে আমদানিকারকের দলিলে বা বিদেশ থেকে আমদানিকারকের নিকট প্রেরিত দলিলে কোন গড়মিল থাকিলে তাহা কাস্টম এবং সিএন্ডএফ এজেন্টের জানার কথা নয়। তাই উক্ত ধারাটি প্রত্যাহার করা উচিত। উক্ত কাস্টম আইন ২০২৩ বিষয়ে আমরা চেম্বার থেকে বলতে চাই, উক্ত আইনে আরও যে সকল অসঙ্গতি রয়েছে তা নিরসনে এফবিসিসিআই ও রাজস্ব বোর্ড আলোচনার প্রেক্ষিতে উক্ত আইনের সংশোধনী আনা আবশ্যক।
এই বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ এ আনার যে প্রত্যাশা রাখা হয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানিয়ে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা রক্ষায় দেশের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে দেশিয় শিল্প উৎপাদন প্রবৃদ্ধির প্রয়াশে বিশেষ করে টেক্সটাইল সেক্টরে যথা প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান আবশ্যক। পাশাপাশি রপ্তানি শিল্প এবং দেশের যাবতীয় মেশিণারীজ/ প্ল্যান্টস্ আমদানিতে সকল প্রতিবন্ধকতার অবসান করে শুধুমাত্র প্যাকিং লিস্ট মতে মেশিনারী চালান ছাড় দিয়ে তার যাবতীয় কার্যক্রম প্রতিস্থাপন ইত্যাদির তদারকি ভ্যাট বিভাগের উপর ন্যাস্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করি। যার ফলে চট্টগ্রাম কাস্টমস্ ও ভ্যাট বিভাগের দ্বৈত আনুষ্ঠানিকতা পরিহার হবে। শুধুমাত্র ভ্যাট বিভাগ শিল্প চালান মেশিনারীজ ইত্যাদি স্থাপন বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
মেশিনারী/ প্ল্যান্ট আমদানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু কোন মেশিনারীজ বা প্ল্যান্ট আমদানি হলে তা দেশের যেকোন স্থানে প্রতিস্থাপন হবে এবং দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। জিডিপি বাড়বে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। মেশিনারীজ বা শিল্পায়নে সরকার বহমূখী রাজস্ব আয়ের সুযোগ পাবে। মেশিনারী/ প্ল্যান্ট এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি আমদানির বহুরকম শর্ত প্রত্যাহার করে সকল প্রকার মেশিনারী/ প্ল্যান্ট আমদানিতে বিদ্যমান হার ১ শতাংশ শুল্ক আদায়ে মেশিনারী আমদানি উন্মুক্ত করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, বাজেটে ঘাটতি মোকাবেলায় দেশি বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতনতার প্রয়োজন বলে মনে করি। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক তদারকী এবং জবাব দিহিতার আওতায় আনলে ব্যয় বৃদ্ধি ও সময়ক্ষেপন হ্রাস পাবে। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকের বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার জবাবদিহিতার জন্য প্রতি ত্রৈমাসিক অন্তর প্রকল্প অগ্রগতির রিপোর্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রেরন সহ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। জনগনের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে সম্পূরক শুল্ক মূল্য বৃদ্ধি সময়োপযোগী বলে মনে করি।