নভেম্বর ২৭, ২০২৪

সারাহ ইসলামের থেকে কিডনি নিয়েও শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারলেন না শামীমা আক্তার (৩৪)।মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আইসিইউতে মারা যান তিনি। এর ফলে সারাহর কিডনি পাওয়া দুই নারীরই মৃত্যু হলো।

গত বছরের জানুয়ারি মাসে সারাহ ইসলামের অঙ্গদানের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো ক্যাডাভেরিক কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট (ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন) করা হয়। বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ শামীমা আক্তার এবং হাসিনার শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করে। এরপর এই কার্যক্রমটি ‘সফল প্রতিস্থাপন’ দাবি করা হয়।

কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে হাসিনা নামে কিডনি পাওয়া ওই নারী মারা যান। সর্বশেষ দ্বিতীয় রোগী শামীমা আক্তারের মৃত্যুর খবর জানালেন বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল। তিনি বলেন, প্রথমজন ফুসফুসের সংক্রমণে মারা গেছেন। এবার দ্বিতীয়জনও চলে গেলেন। এটি আমাদের জন্য খুবই কষ্টের।

অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, শামীমা শেষ ছয় মাস আমাদের আওতার বাইরে ছিল। কিছুদিন আগে তার ভাই আমাদের জানায়, শামীমার ক্রিয়েটিনিন বেড়েছে, একেবারে শুকিয়ে গেছে। পরে তিন সপ্তাহ তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। শুরুর দিকে কিছুটা উন্নতি হলেও কেন শুকিয়ে যাচ্ছিল সেটি ধরতে পারছিলাম না আমরা। কোনো উপায় না পেয়ে চার দিন আগে আইসিইউতে নেয়া হয় শামীমাকে।

তিনি বলেন, এরমধ্যে তার সি ভাইরাস ও বিরল নিউমোনিয়া ধরা পড়েছিল। ডায়ালাইসিসও শুরু করেছিলাম আমরা। কিন্তু উন্নতি হয়নি। বাইরের হাসপাতালেও একদিন নেয়া হয়েছিল, অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় আবারও আমাদের আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানেই রাত ৯টার দিকে মারা যান তিনি।’

এ চিকিৎসক বলেন, হেপাটাইটিস সি পজিটিভ হলে ব্লাড কাজ করে না। এজন্য বিশেষ করে রক্ত লাগে, সেটিও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আর রেসপন্স করেনি।

তবে, শামীমার মৃত্যুর জন্য তার পরিবারের সদস্যদের অবহেলাকেও দায়ী করেন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। বলেন, বাড়িতে থাকার সময়ে অবস্থা খারাপ হলেও আমাদের জানানো হয়নি। যখন তারা বিষয়টি জানিয়েছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এটা বড় অবহেলা ছিল। শুরুতেই যদি আমাদের জানাতো তাহলে হয়তো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম, আরও ভালো চিকিৎসার প্রয়োজনে দেশের বাইরে নিতে পারতাম। তাহলে হয়তো এই অবস্থা দেখতে হতো না।

শামীমার বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায়। গত বছরের ১৯ জানুয়ারি সারাহ ইসলাম নামে ২০ বছরের তরুণীকে ব্রেন ডেড ঘোষণা করেন বিএসএমএমইউ চিকিৎসকরা। ওই রাতেই তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় দুই নারীর শরীরে। ওই তরুণীর চোখের কর্নিয়া দেয়া হয় অন্য দুজনকে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...