সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

‘নদীর জলে আগুন ছিল, আগুন ছিল বৃষ্টিতে’ সদ্য প্রয়াত কবি আসাদ চৌধুরির ‘তখন সত্যি মানুষ ছিলাম’ কবিতার বিখ্যাত দুটি লাইন৷ কানাডার একটি হাসপাতালে দিন দুয়েক আগে মারা গেছেন কবি৷ বেঁচে থাকলে ধর্মশালায় সাকিবকে দেখলে হয়তো লিখতেন ‘আগুন ছিল তার দৃষ্টিতে’৷

কারণ রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানে ভালো শুরু পেলেও বল হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছেন সাকিব। বাঁহাতি এই স্পিনারের সঙ্গে আফগানদের ধস নামিয়েছেন ৩ উইকেট নেয়া মিরাজ। বোলিংয়ের মতো ব্যাটিংয়েও নিজের কাজটা করেছেন তিনি। নাজমুল হোসেন শান্তর মতো হাফ সেঞ্চুরি এসেছে মিরাজের ব্যাট থেকেও। স্পিনারদের দাপটের পর তাদের দুজনের হাফ সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটের জয় দিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করল বাংলাদেশ।

ফজলহক ফারুকির লেংথ ডেলিভারিতে কভারে ঠেলে দিয়ে রান নেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন লিটন দাস। তবে উইকেট থেকে খুব বেশি বের হননি। লিটন বের না হলেও ততক্ষণে উইকেটের মাঝে চলে এসেছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। তবে লিটন সেভাবে সাড়া না দেয়ায় নন স্ট্রাইক প্রান্তে ফিরতেছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। উইকেটে পৌঁছার আগে নাজিবউল্লাহ জাদরানের সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে যায়। সাজঘরে ফিরতে হয় ৫ রান করা তানজিদকে।

আরেক ওপেনার লিটনও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ফারুকির বলে খানিকটা সামনে এগিয়ে এসে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন তিনি। ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক না হওয়ায় ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় ১৩ রান করা এই ওপেনারকে। ২৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদি হাসান মিরাজ। দারুণ ব্যাটিংয়ে শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন তারা দুজন।

দুবার আউট হতে পারতেন মিরাজ। তবে সেই সুযোগ লুফে নিতে পারেননি আফগানিস্তানের ফিল্ডাররা। জীবন পেয়ে ৫৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মিরাজ। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর অবশ্য খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। নাভিন উল হকের বলে মিড অফের উপর দিয়ে তুলে মারতে চেয়েছিলেন মিরাজ। খানিকটা নিচু শট হওয়ায় লাফিয়ে উঠে দারুণভাবে ক্যাচ লুফে নেন রহমত শাহ।

ফলে দারুণ ব্যাটিং করা মিরাজকে ফিরতে হয় ৫৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে। আগের বলে চার মেরে পরের বলে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে পুল করতে চেয়েছিলেন সাকিব। ডিপ স্কয়ার লেগে ফারুকি ঠিকঠাক জায়গায় থাকায় ফিরে যেতে হয় ১৪ রান করা বাংলাদেশের অধিনায়ককে। সাকিব আউট হওয়ার পর ৮০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন শান্ত। তিনি অপরাজিত ছিলেন ৫৯ রানে।

এর আগে টস জিতে আফগানিস্তানকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধোনা করেছেন রহমান উল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহীম জাদরান। ইনিংসের নবম ওভারে ইব্রাহীমকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন অধিনায়ক সাকিব। এই বাঁহাতি স্পিনারের করা অফ স্টাম্পের বাইরের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়েছিলেন জাদরান। তবে ব্যাটে-বলে না হলে বল চলে যায় স্কয়ার লেগে তানজিদ হাসান তামিমের হাতে। ফলে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম উইকেটের স্বাদ পায় টাইগাররা।

আফগান ব্যাটার রহমত শাহকেও বেশিদূর এগোতে দেননি সাকিব। তার করা টসড আপ ডেলিভারিতে এক্রস দ্য লাইন খেলতে গিয়ে টপ এজ হয়ে আউট হয়েছেন রহমত। লিটন দাস জায়গায় দাঁড়িয়ে সহজ ক্যাচ নিয়েছেন। দুই উইকেট হারানোর পর আফগানিস্তানের হাল ধরেছিলেন হাসমতউল্লাহ শহীদি ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ। শহীদিকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি মিরাজ। এই অফ স্পিনারের করা টসড আপ ডেলিভারিতে বড় শট খেলতে গিয়ে তাওহীদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন শহীদি। পরের ওভারে ৪৭ রান করা গুরবাজকে আউট করে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান।

সাকিব নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসেই ৫ রান করা নাজিবউল্লাহ জাদরানকে বোল্ড করে আউট করেছেন। সাকিবের লেংথ বলে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন এই আফগান ব্যাটার। পরের ওভারে মোহাম্মদ নবিকে বোল্ড করেছেন তাসকিন আহমেদ।

তাসকিনের স্টাম্প বরাবর বল অফ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন নবি। তবে ঠিকমতো ব্যাটে-বলে না হলে ব্যাটের কানায় লেগে বলে ভেঙ্গে দেয় লেগ স্টাম্প। ১২ বলে ৬ রান করে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। এরপর আফগানস্তানের লোয়ার অর্ডার গুঁড়িয়ে দিতে বড় অবদান রেখেছেন মিরাজ ও শরিফুল ইসলাম। প্রথমে ৯ রান করা রশিদ খানকে বোল্ড করেন এই স্পিনার। এরপর মুজিব উর রহমানকেও বোল্ড করেছেন তিনি। মাঝে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে ২২ রানে ফিরিয়েছিলেন শরিফুল। শেষ ব্যাটার নাভিন উল হককে ০ রানে আউট করে আফগানিস্তানকে গুটিয়ে দিয়েছেন শরিফুল।

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *