বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের বিষয়ে বাংলাদেশ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিতর্কিত এই আইনটি বিরোধী ও সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে এবং আটক করতে ব্যবহৃত হতো বলেও মন্তব্য করেছে দেশটি। এই পরিস্থিতিতে খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
স্থানীয় সময় সোমবার (৭ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রতিস্থাপন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গটি তোলেন।
ওই সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার করতে চলেছে। বিতর্কিত এই আইনের ব্যবহার ও প্রয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বেশ সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। (এই আইনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের পর) যুক্তরাষ্ট্রের কী এ সম্পর্কে কোনও মূল্যায়ন আছে এবং আইনটি কোন দিকে যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আগেই বলেছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সমালোচকদের গ্রেপ্তার, আটক এবং মুখ বন্ধ করতে ব্যবহৃত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই আইনটি সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘদিনের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। সকল অংশীদারকে (স্টেকহোল্ডার) যেন নতুন খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা করার সুযোগ দেওয়া হয় এবং এই আইনটিতে যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করা হয়, সে বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করি।
এর আগে বাংলাদেশে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম ও বিষয়বস্তুতে পরিবর্তন এনে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে সরকারের নতুন আইন করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাটি নতুন সাইবার আইনে আগের আইনের একই ধরনের ‘দমনমূলক’ বৈশিষ্ট্য না রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানায়।
অফিসিয়াল টুইটার পেজে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক দপ্তর বলেছে, বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিলে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ভিন্নমত দমন এবং অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করতে ক্ষমতাসীন দল ও এর সহযোগীরা কঠোর ওই আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছিল।
টুইটে আরও বলা হয়, তবে বাংলাদেশ সরকারকে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে যেন ওই আইনের দমনমূলক বৈশিষ্ট্যগুলো ফিরিয়ে আনা না হয়।
এর আগে সোমবার বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ পরিবর্তন করে নতুন আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। নতুন আইনটি ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ নামে প্রতিস্থাপিত হবে।
এই বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তিত হয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন হয়েছে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যে যেসব ধারা ছিল, সেই ধারা রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘মিসইউজ’ ও ‘অ্যাবিউজ’ বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি আইনের মাধ্যমে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল নয়, পরিবর্তন হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস হয়। আইনটিকে নিবর্তনমূলক আইন আখ্যা দিয়ে শুরু থেকেই তা বাতিলের দাবি জানিয়ে এসেছে আইনজীবী, ছাত্র-শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন।
তাদের দাবি, ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আইনটির সমালোচকদের মতে, এ আইনে দায়ের হওয়া মামলার সবচেয়ে বিতর্কিত দু’টি বিষয় হলো এখানে মতপ্রকাশকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয় এবং আইনের বেশ কয়েকটি ধারা জামিন অযোগ্য।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মোট ৫৩ ধারার মধ্যে ১৪টি ধারা অজামিনযোগ্য হিসেবে নির্দিষ্ট করা আছে।