ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

সরকারি বন্ডের উন্নয়নে ফিজিবিলিটি স্টাডি করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)সহ বন্ডের সাথে সম্পৃক্ত সবার সঙ্গেই বৈঠক করবে সংস্থা দুটির প্রতিনিধি দল। দেশের পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের ডেভেলপমেন্টের জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।

বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

মুখপাত্র জানান, সেকেন্ডারি মার্কেটে সরকারি বন্ড ডেভেলপমেন্টের একটা কাজ চলছে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল এই মার্কেট ডেভেলপমেন্টের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি করছে। মূল সরকারি সিকিউরিটিজ বিক্রি হয় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের হয়ে কাজ করে। তাই অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর সঙ্গেও তারা কথা বলবেন।

তিনি জানান, বুধবার (৫ জুলাই) এই প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছেন। আজকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি বন্ড নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আইএমএফের ৫ জন ও বিশ্বব্যাংকের ২ জন উপস্থিত ছিলেন। আজকের পুরোটাই হচ্ছে একটি স্টাডি মিশন। তারা প্রথমে সরকারি বন্ড মার্কেটের ফিজিবিলিটি স্টাডি করবেন। কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের কি ডেভেলপমেন্ট আছে এবং কি ডেভেলপমেন্ট করতে হবে সেই সম্পর্কে পরবর্তীতে আইএমএফ একটি রিপোর্ট দেবে।

একটি বন্ড মার্কেটে অনেক কাজ রয়েছে। বন্ড ইস্যু ও বন্ড সেটেলমেন্ট সহ অন্যান্য কাজগুলোর সঙ্গে যারা যারা সম্পৃক্ত থাকবেন তাদের সকলের সঙ্গে আইএমএফ আলোচনা করবে।

রাষ্ট্রীয় খরচ মেটাতে সরকার বিভিন্ন সময় দেশের নাগরিক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেয়। এর বিপরীতে তাদের নামে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যু করা হয়। একে সরকারি সিকিউরিটিজও বলা হয়। তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর জন্য নেওয়া ঋণকে ট্রেজারি বিল ও এক বছর থেকে ২০ বছর পর্যন্ত নেওয়া ঋণকে ট্রেজারি বন্ড বলা হয়।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম অর্থসূচককে বলেন, আগামী ৯ জুলাই বিএসইসির সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের একটি বৈঠক হবে। সার্বিক বিষয়ে মিটিংয়ে আলোচনা হবে। প্রতিনিধি দল যেসব বিষয়ে জানতে চাইবে সব বিষয়ে আলোচনা হবে। মূলত এক্সচেঞ্জ মার্কেট ট্রেডিং ফ্রেমওয়ার্ক, রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক, কাউন্টার পার্টি, ডিলার, ব্রোকারেজ, ট্রেডিং ফি এবং কমিশন এসব বিষয়ে আলোচনা হবে। সরকারি সিকিউরিটিজের ট্রেডিংয়ে ক্লিয়ারিং সেটেলমেন্ট কিভাবে হবে সেবিষয়ে আলোচনা হবে। বন্ডের অন্যান্য বিষয়গুলোও আলোচনায় থাকবে বলে জানান তিনি।

এদিকে বুধবার (৫ জুলাই) ঢাকা সফরের প্রথম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে টানা বৈঠক ও এক কর্মশালা করে প্রতিনিধি দল। বৈঠকে আইএমএফ দেশের আর্থিক খাতে আরও সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে।

আইএমএফ মনে করে, মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে রেপোর সুদ হার বাড়াতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের বিনিময়ে যে টাকা ধার দেয় সেটাকে রেপো বলে। রেপোর সুদ বাড়িয়ে দিলে মার্কেটে টাকার প্রবাহ কমে আসবে যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে আইএমএফ। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ সুদে টাকা ধার দেয় যা রেপো রেট হিসেবে পরিচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে ব্যাংকের বিল বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে স্থিতি দাঁড়ায় ২ লাখ ৭২ হাজার ২০২ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খাতটিতে বিনিয়োগ কমেছে ৫৩ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা।

দেশের পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মতো ২০২২ সালের অক্টোবরে ২৫০টি সরকারি সিকিউরিটিজ বা ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। যার বাজার মূলধন ছিলো ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একসঙ্গে এ লেনদেন শুরু করেছিলো।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...