বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভির সম্প্রচার এক সপ্তাহ বন্ধে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। আপিলে বিষয়টির মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত সম্প্রচার বন্ধ করা উচিৎ হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এক আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকার তথ্য গোপন করে সময় টিভির সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে আরেক আদালতে রিট করা হয়েছে। বিষয়টি নজরে আনা হয় বিচারপতির। বিচারপতি বললেন তিনি বিষয়টি জানতেন না।
তিনি বলেন, একই বিষয় নিয়ে কোম্পানি আদালতে আবেদন রয়েছে। আদালত সেটা গ্রহণ করেছে এবং শুনানির জন্য ২২ আগস্ট তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই আদালতেও বন্ধ করে দেয়ার আবেদন করেছিল। সেখানে তারা বন্ধ করে দেয়ার আদেশ পায়নি। তারা আবার এটা রেখেই আরেক আদালতে আবেদন করেছে।
তিনি বলেন, সিটি গ্রুপ একসময়ে আওয়ামী লীগকে অর্থ জোগান দিতো। তারা ভয় পেয়েছে যে তাদের ৬০-৭০টা কারখানায় ভাঙচুর হতে পারে। এজন্য তারা এই কোম্পানি বন্ধ করতে চায়। এটা তো কোনো যুক্তি হলো না। এই কোম্পানি নিয়ে কথা বলতে হবে। তুমি যদি কোনো অন্যায় করো তাহলে সেটা ভাঙবে, এ কারণে টেলিভিশন চ্যানেল কেন বন্ধ হবে, প্রশ্ন করেন তিনি।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আজকের মধ্যে রায়ের কাগজ পেলে কালকে আমরা আপিল করব। আমরা আশা করি এটার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সম্প্রচার বন্ধ হওয়া উচিৎ না।
এর আগে হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ সময় টিভির সম্প্রচার এক সপ্তাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ১০ আগস্ট সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে আহমেদ জোবায়েরকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ওইদিন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার গুলশানের সিটি হাউসে সময় মিডিয়া লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদ থেকে আহমেদ জোবায়েরকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
পরে ১৪ আগস্ট সময় টিভির এমডি ও সিইও পদ থেকে অপসারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আহমেদ জোবায়ের একটি আবেদন করেন। পরে তার আবেদন গ্রহণ করে আগামী ২২ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত। বিচারপতি খিজির হায়াতের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানি হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের মে মাসে সময় মিডিয়া লিমিটেড গঠনের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আবেদন করেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সে বছরের সেপ্টেম্বরে মোট ১০টি টেলিভিশন লাইসেন্স পায়। তারমধ্যে সময় টেলিভিশন একটি। লাইসেন্স হয় বর্তমান এমডি আহমেদ জোবায়েরের নামে। গঠিত হয় সময় মিডিয়া লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি।
পরে এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগকারী হিসেবে যুক্ত হয় দেশের খ্যাতনামা সিটি গ্রুপ। লগ্নিকারক হিসেবে তারা ‘বি গ্রুপের’ শেয়ার হোল্ডার। আর উদ্যোক্তা হিসেবে আহমেদ জোবায়ের ও অন্যরা ‘এ গ্রুপের’ শেয়ার হোল্ডার। ‘এ গ্রুপ’ ও ‘বি গ্রুপের’ যৌথ স্বাক্ষরে সব ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হয়। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমডির উপস্থিতি এবং অবহিত করা ছাড়াই একটি বোর্ড মিটিং ডেকে আহমেদ জোবায়েরকে অপসারণের খবর ছড়িয়ে দেয়া হয়। যেটিকে অবৈধ মনে করছে সময় মিডিয়া লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টার নজরে আনা হলে তিনি জানান, বর্তমান সরকারের আমলে চর দখলের মতো কোনো জবরদস্তিমূলক কাজ করা যাবে না। সরকারের সব কার্যক্রম স্বাভাবিক এবং আরও গতিশীল হলে এসব জবরদখল চেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।