সরকার সহায়তা তহবিল গঠন করলেও গেল বছর সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ৯৩ শতাংশই ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেনি। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ২৪ জন নিহত ও ৭ হাজার ৪৯৫ জন আহত হন। নিহতদের পরিবার ও আহতদের ৮৭৯ জন বা মাত্র ৭ শতাংশ ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছেন।
বিআরটিএ সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা কার্যকর হওয়ার এক বছরে তহবিলে চাঁদা জমা হয়েছে ১৩৭ কোটি ৫০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৮ টাকা। এর মধ্যে ১৯৪ জনকে সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। তহবিলে জমা আছে ১২৮ কোটি ৯৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৮ টাকা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ২০১৮ সালে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের ৫৩(১) ধারা অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তি ও তাদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবেন আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে। সড়কে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি ছিল বহু বছরের। ক্ষতিপূরণ দিতে গত বছরের প্রথম দিন থেকে সহায়তা তহবিলে নেওয়া হচ্ছে চাঁদা।
আইনে বলা হয়েছে, সরকারি অনুদান, যানবাহনের কাছ থেকে পাওয়া চাঁদা এবং এ আইনের অধীনে আদায় করা জরিমানার টাকা জমা হবে তহবিলে। সড়ক পরিবহন বিধিমালার ১৪৯ ধারায় বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে তাঁর পরিবার অন্যূন ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে। অঙ্গহানি ও পঙ্গুত্বের জন্য ৩ লাখ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনা থাকলে ১ লাখ টাকা সহায়তা পাবেন দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি। সরকারের অনুমোদনে সহায়তার পরিমাণ কমবেশি করতে পারবে ট্রাস্টি বোর্ড। দুর্ঘটনার এক মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে হবে।
গত ২২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬২ আহত ও নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণের চেক দেন। গত দুই মাসে আরও ৩২ জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি পদাধিকারবলে আর্থিক সহায়তা তহবিল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ১২ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডেরও চেয়ারম্যান।
তহবিলে বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইম মুভারের বার্ষিক চাঁদা ১ হাজার ৫০০ টাকা। নতুন নিবন্ধন এবং প্রতিবছর গাড়ির কাগজ হালনাগাদের সময় এই চাঁদা দিতে হয়। মিনিবাস, মিনিট্রাক, পিকআপের বার্ষিক চাঁদা ৭৫০ টাকা। কার, জিপ, মাইক্রোবাসের চাঁদা ৫০০ টাকা। তিন চাকার গাড়ি এবং অন্যান্য যানবাহনের চাঁদা ৩০০ টাকা।
তবে মোটরসাইকেলের ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস বছরে বছরে হালনাগাদ করতে হয় না। তাই এই দ্বিচক্রযান থেকে নিবন্ধনের সময় এককালীন এক হাজার টাকা চাঁদা নেওয়া হয় আর্থিক সহায়তা তহবিলের জন্য। গত বছর ৩ লাখ ১০ হাজারের বেশি নতুন মোটরসাইকেল নিবন্ধন পায়। এই হিসাবে শুধু মোটরসাইকেল থেকে চাঁদা এসেছে ৩১ কোটি টাকার বেশি।
বিধিমালা অনুযায়ী, দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হয়। আবেদন পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করা হবে। ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে ওই কমিটি। আবেদনকারী আপিলও করতে পারবেন। ট্রাস্টি বোর্ডের নিজস্ব জনবল না থাকায় যে এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে, সেখানকার বিআরটিএ কর্মকর্তারা অনুসন্ধান করছেন।
বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম বছরে ৮৭৯ জন সহায়তার জন্য আবেদন করেন। এর মধ্যে অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঠানো হয় ৭৯৪ আবেদন। প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ২৭৩টির। এর মধ্যে ১৯৪ জনকে ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়া হয়েছে জানিয়ে নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘অনুসন্ধান সাপেক্ষে বাকিরাও ক্ষতিপূরণ পাবেন। গত সোমবার ময়মনসিংহের একজন নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকের মাধ্যমে।’ হতাহতের তুলনায় আবেদন কেন কম– প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মাত্র এক বছর হয়েছে, অনেকেই তহবিলের বিষয়ে জানেন না। আবার ৩০ দিনের মধ্যে আসেন না।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদীউজ্জমান বলেন, ‘সহায়তা তহবিল খুবই জরুরি। প্রয়োজন সঠিক তদন্ত, যাতে ক্ষতিগ্রস্তরা দ্রুত ক্ষতিপূরণ পান। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা যেন আবেদন করেন, সে জন্য প্রচার জরু
রি।’