ছাগলকাণ্ডে নতুনভাবে আলোচনায় আসা কাস্টমস কর্মকর্তা মতিউর রহমান পুঁজিবাজারের একজন ‘দক্ষ বিনিয়োগকারী’। এই বাজার থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ বানিয়েছেন বলে নিজেই দাবি করেছেন। শুধু মেয়ের নামে বিনিয়োগ করে ১ কোটি টাকায় তিনি ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছেন বলে জানিয়েছেন। একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষতকারে তিনি এ দাবি করেন। গতকাল এই সাক্ষাতকার প্রচারিত হয়েছে।
নিজেকে দক্ষ বিনিয়োগকারী দাবি করলেও, মতিউরের বক্তব্যের মধ্যে সুবিধাবাদি লেনদেন নিষিদ্ধকরণ আইন {Bangladesh Securities and Exchange Commission (Prohibition of Insider Trading) Rules} লংঘন এবং কারসাজিরও আভাস পাওয়া গেছে।
ইফাত নামে তার দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে ১২ লাখ টাকায় কোরবানীর ছাগল বুকিং দিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি মতিউর রহমানের নাম জড়িয়ে যায়। ইফাত দাবি করেন, তার বাবা মতিউর রহমানকে উপহার দেওয়ার জন্য সে এই ছাগল কিনছে। বিষয়টি টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়।
ছাগলকাণ্ডে নাম জড়িয়ে যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন মতিউর রহমান। তার ছেলের এত টাকার উৎস এবং তার নিজের দুর্নীতি নিয়েও নানামুখী আলোচনা শুরু হয় সারাদেশে। এমন অবস্থা তিনি একাধিক গণমাধ্যমে কাছে দাবি করেন, ইফাত তার সন্তান নয়। এমনকি আত্মীয় বা পরিচিতও নয়। কিন্তু তাতেও বিতর্কের অবসান না হওযায় তার ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে এগিয়ে আসে একটি বেসরকারি টেলিভিশন। দীর্ঘ এক সাক্ষাতকারের মাধ্যমে তাকে নানাভাবে প্রমোট করা ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া যায়, যার মাধ্যমে তিনি তার বিপুল সম্পদের জাস্টিফিকেশন তুলে ধরতে পারেন।
ওই সাক্ষতাকারে মতিউর রহমান দাবি করেন, তিনি বুদ্ধি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে কাজে লাগিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার দাবি, তিনি দুর্বল কিন্তু সম্ভাবনাময় কোম্পানির মালিকদের সাথে বসে ওই কোম্পানির উন্নয়নের পরিকল্পনা করেন। ওই পর্যায়ে তিনি কম দামে বিপুল সংখ্যক শেয়ার কিনে নেন, পরে কোম্পানি কিছুটা ভাল করলে উচ্চ দামে ওই শেয়ার বিক্রি করে বিপুল মুনাফা করেন।
তিনি জানিয়েছেন, ট্যানারি খাতের কোম্পানি ফরচুন সু’র মালিকরা তার কাছের মানুষ। তাকে ওই কোম্পানির মালিকরা ৮ টাকা দামে শেয়ার দিয়েছিল। পরে তিনি ৫৪ টাকা দামে ওই শেয়ার বিক্রি করে অনেক মুনাফা করেছেন।
মতিউর আরও দাবি করেন, তিনি একটি জমি বিক্রি করে সাড়ে ৪ কোটি টাকা পেয়েছিলেন। ওই টাকা থেকে পুঁজিবাজারে ২ কোটি টাকা নিজের নামে এবং ১ কোটি টাকা তার মেয়ে ফারহানা রহমানের নামে বিনিয়োগ করেন। শুধু তার মেয়ের বিনিয়োগ থেকেই তিনি ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছেন।
আলোচিত মতিউর এ সময়ে একটি হিসাবে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছেন। অর্থাৎ মুনাফার হার ১৪০০ শতাংশ। তার নিজের নামের বিনিয়োগ থেকে কত টাকা মুনাফা করেছেন, তা না জানালেও সেটি ২০/২৫ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা যায়। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে চলছে মন্দা অবস্থা। এই বাজারে সিংহভাগ বিনিয়োগকারী বিপুল লোকসানের শিকার হলেও মতিউরের এই অবিশ্বাস্য মুনাফা অর্জনের বিষয়টি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কোনো ধরনের কারসাজি ছাড়া স্বাভাবিক বিনিয়োগ থেকে এমন মুনাফা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, যাদের রয়েছে দক্ষ ও পেশাদার রিসার্চ টিম, সেসব প্রতিষ্ঠানও এই সময়ে গেড় ২০ শতাংশ মুনাফা করতে পারেনি।