কানাডার নাগরিক এবং সেখানে বসবাসরত শিখ সম্প্রদায়ের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি)। গ্রেপ্তাররা হলেন করণপ্রীত সিং (২৮), কমলপ্রীত সিং (২২) এবং করণ ব্রার (২২)।
শুক্রবার কানাডার অ্যালবার্টা প্রদেশের এডমন্টন শহর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরসিএমপি জানিয়েছে, সম্ভাব্য গ্রেপ্তার এড়াতে এই তিন জন এডমন্টন থেকে নিজেদের আবাস গুটিয়ে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সোমবারের মধ্যে তাদের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে পৌঁছানোর কথা ছিল।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে নিজেদের পৃথক রাষ্ট্র খালিস্তান বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ভারতীয় শিখদের একাংশ। সত্তরের দশকের শেষ থেকে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের অভ্যন্তরে সেই আন্দোলন দমনে সফল হয় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
তবে ভারতে থেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপে গিয়ে স্থায়ী হওয়া খালিস্তানপন্থি শিখরা আন্দোলন জারি রেখেছেন। হরদীপ সিং নিজ্জর ছিলেন কানাডার খালিস্তানপন্থি শিখদের সংগঠক ও আধ্যাত্মিক নেতা। ১৯৭৭ সালে তিনি ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলা থেকে দেশটিতে গিয়েছিলেন, পরে সেখানাকার নাগরিকত্বও অর্জন করেন।
ভারতের অন্যতম বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন খালিস্তানি টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিসের কানাডা শাখার সংগঠক ও নেতা হওয়ার কারণে নয়াদিল্লির একজন তালিকাভুক্ত ফেরার সন্ত্রাসীও ছিলেন হরদীপ। দু’টি সংগঠনই ভারতে নিষিদ্ধ।
গত ২০২৩ সালের ১৮ জুন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বৃহত্তম শহর ভ্যানকুভারের শহরতলী এলাকা সারেতে একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন হরদীপ সিং নিজ্জর।
এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতকে সরাসরি দায়ী করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে দেওয়া এক ভাষণে ট্রুডো বলেন, তার দেশের গোয়েন্দারা হরদীপ হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন। এ ঘটনাকে কানাডার সার্বভৌমত্বের জন্য তীব্র অবমাননাকর বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
নয়াদিল্লি অবশ্য এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘মনগড়া’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে হরদীপ হত্যার তদন্ত শুরু করে কানাডা।
শুক্রবার তিন জনকে গ্রেপ্তারের পর আরসিএমপির সুপারিন্টেডেন্ট মনদীপ মুকার রয়টার্সকে বলেছেন, ‘ভারতের সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে আমরা তদন্ত শুরু করেছি।’
আরসিএমপির কমিশনার ডেভিড টেবৌল বলেছেন, ‘তদন্ত এখনই শেষে হচ্ছে না; কারণ আমাদের ধারণা, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও লোকজন যুক্ত। আমরা প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করার লক্ষ্য নিয়েছি।’
এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে রাজধানী অটোয়ায় ভারতের প্রধান দূতাবাস কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স; কিন্তু কোনো মুখপাত্র ও কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে রাজি হননি।