১০০ গ্রাম শসাতে পানির পরিমাণ ৯৪.৯ গ্রাম এবং ক্যালরি ২২ কিলো ক্যালরি। এছাড়াও একটি গবেষণায় দেখা গেছে হাফ কাপ ছোট করে কাটা শসায় রয়েছে ১.৯ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ০.৩ গ্রাম ফাইবার, ০.৩ গ্রাম প্রোটিন। তাই দিনে একটি শসাই যথেষ্ট। শসার উপকারিতা যেমন আছে তেমনি শসার অপকারিতা রয়েছে। নিম্নে শসার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
সবজির মধ্যে উন্নতম হল শসা। এটি বেশিরভাগ সালাত হিসেবে খাওয়া হয় এছাড়াও রান্না করে এবং কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। সবজিটি মৌসুম অনুযায়ী হলেও এখন সারা বছরই পাওয়া যায়। সারা বিশ্বে আবাদ করা সবজির মধ্যে চার নম্বর অবস্থান শসার। শসার বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
শসার ঔষধি গুনাগুন গুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। শসার বেশ কিছু উপকার দিকগুলো রয়েছে। এই সবজির মধ্যে রয়েছে ভিটামিন কে এবং প্রদাহ প্রতিরোধী উদ্ভিদ যৌগ, যা চোখের জন্য অনেক উপকারী। এর পাশাপাশি রক্তচাপ কমায়, হার্টের সুরক্ষা বাড়ায়, পানি শূন্যতা দূর করে, শরীরের ভিটামিনের অভাব দূর করে, বিষাক্ততা দূর করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
ওজন কমাতে সাহায্য করে, চোখের জ্যোতি বাড়ায়, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে, মাথাধরা থেকে নিষ্কৃতি, কিডনি সুস্থ রাখে, ব্যথার উপশম করে, দাঁত ও মাড়ি ভালো রাখে। এছাড়াও বিভিন্ন গুনাগুন রয়েছে শসার। শসার এই গুণাগুণ পাওয়ার জন্য, বা শরীরের ভিটামিনের অভাব পূরণ করার জন্য নিয়মিত শসা খাওয়া যেতে পারে। আজকের এই পোস্টে থেকে শসার উপকারীতা কয়েকটি ভাগে ভাগ করে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
শসার স্বাস্থ্য উপকারিতা
বলা হয়ে থাকে যারা নিয়মিত ফল খেতে পারবে তাদের শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। অনেকে নিয়ম করে ফল খেতে পারে আবার অনেকেই খেতে পারে না। ফলের চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে অনেকটাই কার্যকারী শসা। শসা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় এটি রান্না করে খাওয়া যায়। এর বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তাহলে চলুন শসার কিছু উপকারিতা দিকগুলো যেগুলো জেনে রাখা খুবই জরুরী।
হাড় মজবুত করে– শসাতে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি ভিটামিন কে রয়েছে। ভিটামিন কে হাড়ের ক্ষয় ঝুঁকি কমায় এবং ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্যকরে।যার ফলে হাড়ের গঠন মজবুত ও শক্ত হয়।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে– যাদের হজম শক্তি দুর্বল তাদের জন শসা অনেক উপকারী একটি সবজি। কেননা শসার ভিটামিন, খাদ্য আঁশ এবং পানি খাবার হজমে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও প্রতিদিন শসা খাওয়া হলে পাচনতন্ত্র সুস্থ থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়।
দাঁত ও মাড়ির জন্য ভালো– শসা আমাদের মুখের অ্যাসিডের ভারসাম্য ও পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এবং পাশাপাশি দাঁতের প্লাক এবং টক্সিন তৈরি করে পরিষ্কার করে। এজন্য নিয়মিত শসা খেতে পারলে দাঁত ও মাড়ির রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। এরসাথে শরীরে কাঁটাছেঁড়া এবং ক্ষত প্রতিরোধ ও নিরাময় করা সহজ হয়।
দেহের পানি শূন্যতার অভাব পূরণ করে– গরমের পানি পিপাসা দূর করার ক্ষেত্রে শসার ভূমিকা অনেক। কারণ শসাতে প্রায় পঁচানব্বই শতাংশ পানি রয়েছে এর ফলে শরীর আর্দ্ররাখতে ও পানির স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
মানসিক চাপ কমায়– শসাতে ভিটামিন বি ওয়ান, ভিটামিন বি ফাইভ এবং ভিটামিন বি সেভেন পাওয়া যায়। যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
হৃদযন্ত্রের সুস্থতা– শসাতে তিনটি উপকারী উপাদান রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন কে। শসার উপকারী উপাদান থাকার ফলে হৃদযন্ত্রের সুস্থতা রক্ষা করতে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়ামও পটাসিয়াম গ্রহণের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত শসা খাওয়া কোলেস্টেরলেরমাত্রা কমায় এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধা এবং রক্তে ক্যালসিয়ামপ্রবাহের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কিডনির সুরক্ষায়– যারা নিয়মিত শসা খায় তাদের শরীরের শসা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ঠিক রাখে । যার ফলে কিডনি থাকে সুস্থ ও সতেজ এবং কিডনির সুরক্ষা বৃদ্ধি পায়।
ওজন কমায়– শসাতে ক্যালরির মাত্রা কম এবং পুষ্টিগুণ বেশি। ক্যালরি মাত্রা কম হওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়– শসায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দীর্ঘস্থায়ী কোন রোগের সম্ভবনা কমায়। এজন্য শরীর সুস্থ রাখাতে শসার উপকারীতা অপরিসীম।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে– নিয়মিত শশার রস খাওয়ার ফলে মস্তিস্কে ও ধমনীতে জমে থাকা প্রচুর এলডিএল হ্রাস হয়। ফলে স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়। এবং বিভিন্ন মেডিসিন খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায়।
ব্যথা থেকে মুক্ত করে– শসায় প্রচুর পরিমাণে সিলিকা আছে। গাজরের রসের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে খেলে দেহের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নেমে আসে। এতে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কিডনির পাথর-শসার মধ্যে যে পানি থাকে তা আমাদের দেহের বর্জ্য ও দূষিত পদার্থ বের করতে দারুণ কাজ করে। নিয়মিত শশা খেলে কিডনিতে সৃষ্ট পাথর গলে যেতে সহায়তা হয়। ইউরিনারি, ব্লাডার, লিভার ও প্যানক্রিয়াসের সমস্যার সমাধানে বেশ সাহায্য করে শশা।
মাথাধরা থেকে নিষ্কৃতি–শসায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও সুগার আছে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েক স্লাইস শসা খেয়ে নিলে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর এ সমস্যা থাকবে না।
শসার খোসার উপকারিতা
আপেল খোসা সহ খাওয়া যায় তেমনি শসাও খোসা সহ খাওয়া যায়। তবে অনেকেই আপেলের খোসা ফেলে দিয়ে খায় তেমনি শসার ক্ষেত্রেও খোসা ফেলে দিয়ে খায়। শসা স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য উপাদান। যা আমরা উপর থেকে জানতে পেরেছি। অনেকেই ভাবে শসার খোসার (বাকল বা চামড়া) উপকারিতা নেই এটি তাদের ভুল ধারণা। শসার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি শসার-খসার উপকারিতা রয়েছে।শসার উপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হয়েছে।
চোখের সমস্যা দূর করে– শসার খোসায় প্রয়োজন ভিটামিন এ রয়েছে। যা চোখের স্বাস্থ্য ও দৃষ্টিশক্তির জন্য ভীষণ জরুরি। তবে শসার খোসা ফেলে দিলে ভিটামিন-এ আর অবশিষ্ট থাকে না।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে– শসার খোসায় ভিটামিন সি রয়েছে। ভিটামিন সি ত্বকের যত্নে অনেক কার্যকারী। ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ ড্যামেজ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরোধে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও কোলাজেন উৎপাদনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। তাই শসা খোসাসহ খেলে ত্বকের বয়সের ছাপকে দূরে রাখা সম্ভব হবে।
মেদ কমায়– শসার খোসায় ক্যালরির মাত্রায় কম থাকায় মেদ কমাতে সাহায্য করে। ক্যালরি কম হলেও ক্ষুধার প্রকোপ কমাতে শসা বেশ কার্যকর। তাই ক্ষুধা পেলেই নিশ্চিন্তে খেয়ে নিতে হবে ছোট একটি খোসাসহ শসা।
কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের সমস্যা কমায়– শসার খোসাতে রয়েছে অদ্রবণীয় আঁশ। অন্যদিকে শসার ভেতরের নরম অংশে থাকে দ্রবণীয় আঁশ। উভয় প্রকৃতির আঁশ মলকে নরম করতে ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে চমৎকার কার্যকরি। শসার উপকারিতা পাওয়ার জন্য খোসা সহ খেতে হবে।
ত্বক উজ্জ্বল করে– শসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-নায়াসিন, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন সি এবং জিংক ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ত্বক উজ্জ্বল করার জন্য শসা সাথে লেবুর প্রয়োজন হবে। একটি পরিষ্কার পাত্রে শসার রসের সাথে লেবুর রস মিলিয়ে তা মুখে ভালো করে মাখুন। একটানা বিশ মিনিট রাখার পর মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। আর এভাবে প্রতিদিন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার ত্বক উজ্জ্বল করতে পারবেন।
বলিরেখা দূর করে– বলিরেখা সম্পূর্ণরূপে দূর করতে সাহায্য করে শসা। এতে রয়েছে ভিটামিন কে এবং ভিটামিন সি যা আমাদের ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য করে। ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ এবং বুড়িয়ে যাওয়া ভাব ও বিভিন্ন ধরনের দাগ বলিরেখা দূর করে। এর সাথে ত্বকের এবং বিবর্ণ ভাব সম্পূর্ণ দূর করে ত্বক কে উজ্জ্বল ও মসৃন করতে সাহায্য করে।
রোদে পোড়া দাগ দূর করে– শসা কেটে স্লাইস করে মুখে লাগাতে পারেন। অথবা শসা বেটে এর রস মুখে লাগিয়ে পনেরো মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। কিংবা শসার রস দিয়ে আইস কিউব বানিয়ে ফ্রিজে রাখুন। প্রতিদিন এই আইস কিউব মুখে ঘষুন। এতে আপনার ত্বকের রোদে পোড়া দাগ অনেকটা দূর হবে।
ত্বকের তৈলাক্ত দূর করে– ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে এবং তৈলাক্ততা দূর করে শসা। বেসন ও শশার প্রয়োজন হবে। একটি পরিষ্কারপাত্রে শসা রস বের করে তিন টেবিল চা চামচ ও দুই টেবিল চা, চামচ বেসন এক টেবিল চামচ বাটার মিল্ক মেশান। এর সাথে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভালো করে নেড়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ত্রিশ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দূর হবে ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি– ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে শসা না খাওয়াই ভালো। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া যেতে পারে। কচুরবিতিন নামক এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া যায় শসাতে। শসা খাওয়ার মাধ্যমে এ পদার্থটির শরীরে প্রবেশ করে এ কারণে লিভার, অগ্ন্যাশয়, পিত্তথলি সহ অন্যান্য অংকগুলিতে প্রদাহ দেখা দিতে পারে। তাই যাদের পূর্বে থেকে ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শসা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা– এছাড়াও যাদের শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা রয়েছে শসা খেলে তা বৃদ্ধি হতে পারে। বেশি পরিমাণে শসা খেলে অনেকের পায়ে পানি জমে যায়। ফলে পা ফুলে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়।