নভেম্বর ১৭, ২০২৪

৯৪ বছর বয়সি কুপার বলেন, ‘‘মন ভেঙে যায়, যখন দেখি কেউ মোবাইল ফোন দেখতে দেখতে রাস্তা পার হচ্ছেন। কিছু মানুষ মারা না গেলে কারও বোধ আসবে না।’’

‘‘লোকজন সারা দিন ফোনের দিকে তাকিয়ে। এমন হবে ভাবিনি!’’— বলছেন খোদ এই যন্ত্রের সৃষ্টিকর্তাই। ৫০ বছর আগে মোবাইল ফোন আবিষ্কার করেছিলেন আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপার। এখন এই যন্ত্রের প্রতি মানুষের মোহ ও মায়া দেখে রীতিমতো ক্ষুব্ধ তিনি। স্রষ্টার বক্তব্য, পকেটের ভিতরে থাকা ছোট্ট যন্ত্রটা বহু মুশকিল আসান করে দিতে পারে ঠিকই, কিন্তু মানুষ একটু বেশি মাত্রায় মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছে!

সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার ডেল মারেতে নিজের দফতরে বসে একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৯৪ বছর বয়সি কুপার বলেন, ‘‘মন ভেঙে যায়, যখন দেখি কেউ মোবাইল ফোন দেখতে দেখতে রাস্তা পার হচ্ছেন। কিছু মানুষ মারা না গেলে কারও বোধ আসবে না।’’ সে-ও কি হয়নি! হয়েছে। তার পরেও যন্ত্রমুগ্ধ মানুষ আবিষ্ট হয়ে রয়েছে মোবাইল ফোন ও তার ভার্চুয়াল জগতে।

কুপারের নিজের হাতেও অ্যাপলের ঘড়ি। ব্যবহার করেন আইফোনের নবতম সংস্করণটি। এ বিষয়ে বেশ শৌখিন কুপার। জানালেন, নতুন সংস্করণ এলেই তিনি মোবাইল ফোন বদলান। তবে একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেছেন, ফোনে হাজার হাজার অ্যাপ রয়েছে, যার বেশির ভাগের ব্যবহার তিনি জানেন না। কুপারের কথায়, ‘‘আমার নাতিনাতনিরা বা তাদের ছেলেমেয়েরা যে ভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, আমি কোনও দিন পারব না।’’ জানিয়েছেন, ফোন তিনি বেশিটাই ব্যবহার করেন কথা বলার জন্য। কুপার এ-ও বলেন, ‘‘আজ যে মোবাইল ফোনের জাদুতে মজে রয়েছে মানুষ, তা-ও এক সময় থাকবে না। প্রতিটি প্রজন্ম আরও বুদ্ধি ধরবে, প্রযুক্তি আরও অনেক উন্নত হবে।’’ সত্যিই তো তাই। ৫০ বছর আগে যে যন্ত্র তিনি আবিষ্কার করেছিলেন, সেটাই কি আর আগের মতো আছে!

কুপার প্রথম মোবাইল ফোনটি তৈরি করেছিলেন ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল। সেই ফোন ছিল বেশ ভারী, অনেক তারে প্যাঁচানো এক জটিল বস্তু। সে সময়ে তিনি একটি মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থায় কাজ করতেন। লক্ষ লক্ষ ডলারের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল ওই সংস্থা। বাজারে প্রতিযোগিতাও দারুণ। রীতিমতো টক্কর চলছে, কে প্রথম মোবাইল ফোন আনবে। কারণ মোবাইল ফোন তৈরির পরিকল্পনা মানুষের মাথায় এসেছিল অনেক দিন আগেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের পরপরই প্রথম বিষয়টা নিয়ে ভাবা শুরু হয়েছিল। ১৯৬০-এর দশকে গাড়িতে ফোন রাখার ব্যবস্থা করে একটি সংস্থা। কিন্তু সেই আবিষ্কার খুব বেশি সফল হয়নি। গাড়িতে বিশালাকার ব্যাটারি রাখতে হত তার জন্য। সার্বিক ভাবে বিষয়টা বেশ ঝামেলার। কুপারের মনে হয়েছিল, এতে আসল কার্যসাধন হয়নি। লোকজনের সঙ্গে সবসময় তাদের নিজস্ব ফোন থাকছে না।

১৯৭২ সালের শেষে কুপার ঠিক করেন, তিনি এমন একটা যন্ত্র তৈরি করবেন, যা কোনও ব্যক্তি সবসময় নিজের সঙ্গে রাখতে পারবেন। যে কোনও জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন। টানা তিন মাস দিনরাত এক করে গবেষণা করেন কুপার ও তাঁর বিশেষজ্ঞ দল। পরের বছর মার্চ মাসের শেষে সমাধান মেলে। কুপারের তৈরি করা প্রথম মোবাইল ফোনটির ওজন ছিল ১ কিলোগ্রামেরও বেশি। সর্বোচ্চ ২৫ মিনিট কথা বলা যেত। সেই ২৫ মিনিট হাতে নিয়েই কুপার প্রথম ফোনটি করেছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী ফোন প্রস্তুতকারক সংস্থার অফিসে। বলেছিলেন, ‘‘আমি মার্টিন কুপার বলছি। আমি একটা হাতেধরা সেল ফোনে কথা বলছি। একটা সত্যিকারে সেল ফোন, ব্যক্তিগত, এক জায়গা থেকে অন্যত্র বয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, হাতে ধরা যায়।’’ ও পারে তখন অপার নিস্তব্ধতা!

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...