দুই দিনের এক গুরুত্বপূর্ণ সফরে ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার জন্য আগামী ১৪ মে বাংলাদেশ সফরে আসছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে আলোচনা করবেন।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যান-মারি ট্রিভেলিয়ানর সঙ্গে বৈঠক শেষে লু’র সফরে আলোচনার বিষয়ে এমন তথ্য দেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে ডোনাল্ড লু মূলত আসছেন। এক্ষেত্রে ওনারা আমাদের সহযোগিতা করছেন, সেটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে। অন্যান্য বিষয়গুলো নিশ্চয়ই আলোচনায় আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বরাবরই চমৎকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠির মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক আরও উন্নীত করার ব্যাপারে একযোগে কাজ করছে দুই দেশ। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতের দিনগুলোতেও আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবো। এবং ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার মাধ্যমে আমাদের দুই দেশের যে অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক আছে সেটি আরও গভীর করতে চাই।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ডোনাল্ড লু’র সফরটি হবে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর প্রথম। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর চারবার বাংলাদেশ সফর করেছেন লু। গত বছরের জুলাইতে তিনি সর্বশেষ বাংলাদেশ সফর করেন। তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার সঙ্গী হয়ে ঢাকায় এসেছিলেন।
এদিকে দুই দিনের সফরে বুধবার রাতে ঢাকায় পৌছেছেন ভারতের পররাষ্ট্র-সচিব বিনয় কোয়াত্রা। তিনি ঢাকায় আসার একদিন আগে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। কোয়াত্রার সফরে সীমান্ত হত্যার প্রসঙ্গটি তোলা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। কোয়াত্রার সফরে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে নানা বিষয় আছে। স্বাভাবিকভাবে নানা বিষয় আলোচনা হবে। তিনি আসার পর আমরা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, আমরা অবশ্যই সীমান্ত হত্যার বিপক্ষে। মঙ্গলবার যে ঘটনা ঘটেছে সেটি দুঃখজনক। দুই দেশে এটি যাতে না হয় সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং সীমান্তে যারা প্রহরী, দুই পক্ষে যারা আছেন তারা যেন কোনো ক্ষেত্রে এমন বলপ্রয়োগ না করে। প্রাণহানি ঘটে সেটির জন্য আমরা রেগুলার কনসালটেশনের মধ্যে আছি। ভারতের পররাষ্ট্র-সচিব আসলে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। বাংলাদেশ সফরকালে কোয়াত্রা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একই সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণ পৌঁছে দেবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ঢাকা সফরকালে ভারতের পররাষ্ট্র-সচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্র-সচিব মাসুদ বিনে মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তিনি।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভকারীদের দমন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমাদের দেশে হিরো আলমকে ঘুষি দিলে বিবৃতি দেওয়া হয়। আবার চরমোনাইয়ের ভাইকে ঘুষি মারলেও বিবৃতি দেয়। এখন যে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হলো, এ নিয়ে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) বক্তব্য কী সেটা জানার প্রবল আগ্রহ আমার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কোনো একজন মেয়র প্রার্থীকে ঘুষি মারলে সেটার জন্য বিবৃতি দেওয়া হয়। হিরো আলমকে ঘুষি মারলে বিবৃতি দেয়, আবার চরমোনাইয়ের ভাইকে ঘুষি মারলেও বিবৃতি দেয়। এখন যে ২ হাজার ৪০০ বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হলো, শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হলো এ নিয়ে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) বক্তব্য কী সেটা জানার প্রবল আগ্রহ আমার।
হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখতে পাচ্ছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যারা বিক্ষোভ করছে তাদের কীভাবে ব্রুটালি দমন করা হচ্ছে। এমনকি শিক্ষকরাও রেহাই পাচ্ছে না। একজন শিক্ষকের বুকের পাঁজর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা আমাদের দেশে বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে যদি আমাদের পুলিশ করত, আমার প্রশ্ন এখন তারা কী করত?