পবিত্র রোজার মাসে ব্রেইন তথা মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের অভিভাবকরা রোজা নিয়ে প্রায়ই কিছু প্রশ্ন করেন যেমন- রোজা কি মানসিক রোগীর উপসর্গকে বাড়িয়ে দিবে? বা রোজায় মানসিক রোগীরা তাদের ওষুধ বা ইনজেকশন কিভাবে নেবেন?
প্রকৃতপক্ষে রোজা বা Intermittent Fasting মানসিক রোগীদের জন্য উপকারী। রোজা মানসিক রোগীদের আবেগ (Emotion) নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে এবং মনোযোগ (Concentration) ও মেমোরি (Memory) সুগঠিত রাখে।
রোজার সময় দেহে যে কিটোন উৎপন্ন হয়- এর মধ্যে বিএইচবি (BHB- Beta hydroxybutyrate) বিষন্নতা রোগ প্রতিকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ব্রেইনের জটিল রোগ উপশমে রোজা
রোজার সময় দেহ বা ব্রেইন গ্লুকোজের পরিবর্তে শরীরের ক্ষতিকর চর্বিকে শক্তি উৎপাদনে ব্যবহার করে ফলে উৎপন্ন হয় কিটোন বডি। পজিট্রন ইমিশন টোমোগ্রাফিক (PET Scan) করে দেখা গেছে রোজা বা ফাস্টিংয়ে ব্রেইন সেল অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় ৭-৮ গুণ বেশি কিটোন বডি ব্যবহার করে থাকে।
রোজার ফলে উৎপন্ন কিটোন বটি অটিজম (Autism), এলজিমার্স (Alzheimer’s), এডিএইচডি (ADHD), মৃগীরোগ (Epilepsy), পারকিনসন্স ডিজিজ (Perkinsons disease) এবং ডিমেনশিয়া (Dementia) রোগীদের জন্যে উপকারী। ট্রমাটিক ব্রেইন ইনজুরির (TBI) পর ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা রোজা ব্রেইন কোষের গঠনের জন্য উপকারী।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা রোজা মৃগি রোগের জন্য উপকারী। দুরারোধ্য মৃগি রোগে (Treatment Resistant Epilepsy) আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় ফাস্টিং একটি কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে কিছু কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে।
ব্রেইন স্ট্রোক এবং হৃদরোগে রোজা
চিকিৎসা গবেষণায় বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় কারন ব্রেইন স্ট্রোক (Ischemic stroke); কিন্তু রোজা ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। স্থুলতা কমিয়ে রোজা ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমিয়ে আনে।
রোজায় ব্রেইনের নিউরোপ্লাসটিসিতে প্রক্রিয়া (Neroplasticity) অধিকতর সক্রিয় হয় এবং এর মাধ্যমে ব্রেইনের কোষগুলোর মধ্যে নতুন নতুন সংযোগ স্থাপন হয়, ব্রেইন কোষ নতুনভাবে বিন্যস্ত হয়।
গবেষণা মতে, হার্ট রেইট বা হৃদ স্পন্দন ও ব্লাড প্রেশার কমানোর মাধ্যমে রোজা হৃদরোগের জটিলতা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
রোজায় (Intermitten Fasting) শরীরের অটোফ্যাগী (Autophagy) প্রক্রিয়া অধিকতর সচল হয় এবং এর মাধ্যমে শরীর থেকে পুরোনো, অকেজো কোষ দেহ থেকে বের হয়ে যায়। এ অটোফ্যাগী প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণার জন্য সম্প্রতি একজন জাপানি বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। রোজার মাধ্যমে শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর চর্বি কমে শরীরের স্থুলতা হ্রাস পায়। ক্লান্তি বোধ কমে আসে।
মানসিক রোগের ওষুধ এবং রোজা:
মানসিক রোগের ওষুধ একবেলা কিংবা দুইবেলা হওয়ার জন্য ওষুধ সেবনে রোজাদারদের জন্যে কোন সমস্যা হয় না। ওষুধ একবেলা হলে ইফতারের পর আর দুইবেলা হলে ইফতার এবং সাহরির সময়ে সেবন করা যায়।
ব্রেইন বা মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়ার জন্য অনেক সময় সাইকিয়াট্রিস্টরা ব্রেইনের ইঞ্জেকশন নিতে পরামর্শ দেন কারণ এটি সহজলভ্য- সাধারণত প্রতি সপ্তাহে বা মাসে প্রতি একবার দিলেই হয়। এতে রোগীকে বা তাদের স্বজনকে আলাদা কোনো দুশ্চিন্তা পোহাতে হয় না।
ইসলাম ও রোজা
রোজা মুসলমানদের একটি ফরজ বিধান। আল্লাহতায়ালা সুরা বাকারায় ১৮৩ নাম্বার আয়াতে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারিতা (তাকওয়া) অর্জন করতে পার।’
আরেকটি আয়াতে বলেন, ‘কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে যেন এ মাসের রোজা রাখে’। (সূরা বাকারা: ১৮৫)।
রোজা ও প্রিয় নবী (সা.):
রাসূল সাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম সপ্তাহে দুই দিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা পালন করতেন।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। আর আমি পছন্দ করি, আমার আমল এমন সময় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার’। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৪৭)
আসুন সিয়াম পালনের মাধ্যমে দেহ ও মনে সুস্থতার পাশাপাশি আমরা আজীবন সব ধরনের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার আমল করি, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করি।