প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয় দেশে আনতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে গতকাল বৈদেশিক মুদ্রায় নিয়োজিত সব ডিলার এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত এমএফএস প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছে।
বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানো আরও সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসীদের অর্থ বিতরণে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করার অপতৎপরতা ঠেকানোও এর অন্যতম উদ্দেশ্য। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু এমএফএস এজেন্ট ও হিসাব চিহ্নিত করেছে, যারা হুন্ডি চক্রের কবলে পড়েছে কিংবা স্বেচ্ছায় ব্যবহূত হয়েছে। সিআইডি বিষয়টি তদন্ত করেছে। এরই মধ্যে ৫ হাজারের বেশি এজেন্টশিপ বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া দুই শতাধিক এমএফএস হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে।
সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালার আওতায় এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় প্রত্যাবাসনের সুযোগ পাবে, যা অবৈধ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে সহায়তা করবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়বে। জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের চেয়ে কমে গেছে, যা দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এরই মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও অনেক কমে গেছে। এমএফএস প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আনার সুযোগ এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়ক হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নতুন ব্যবস্থা চালুর ফলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান প্রবাসী আয় প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিদেশের অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস প্রোভাইডার, ব্যাংক, ডিজিটাল ওয়ালেট, কার্ড স্কিম, এগ্রিগেটর এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে। আগ্রহী এমএফএস প্রতিষ্ঠানকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আয় প্রত্যাবাসন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে অনুমোদন চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হবে।
প্রজ্ঞাপনের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি প্রতিসঙ্গীদের সঙ্গে স্থানীয় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। প্রতিসঙ্গী প্রতিষ্ঠানের হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা জমা হবে, যা প্রবাসীর মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল হিসাবে টাকায় জমা হবে। বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা যথাযথ ই-কেওয়াইসি পরিপালন করে এমএফএস হিসাব খুলতে পারবেন। এদেশীয় ব্যাংকে মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারদের সেটেলমন্টে অ্যাকাউন্ট সুবিধা দেবে। ব্যাংকের বিদেশে থাকা নস্ট্রো হিসাবে অর্থ জমার পর তার সমপরিমাণ টাকা সেটেলমেন্ট হিসাবে জমা হবে।
এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, তাঁরা আশা করছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগে প্রবাসীরা লাইসেন্সপ্রাপ্ত এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেই নিরাপদে এবং আরও দ্রুত বৈধ উপায়ে অর্থ পাঠাতে পারবেন, যা রেমিট্যান্স প্রবাহে আরও গতিশীলতা আনবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুসারেই পরবর্তী সব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে।
অবৈধ মানি চেঞ্জারের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ
এদিকে সোমবার অন্য প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অবৈধ মানি চেঞ্জার বা মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের কোনো কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচাও করছে। একই সঙ্গে ব্যাংক বা এমএফএস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভার্চুয়াল বা ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচা বা হস্তান্তর বা বিনিয়ম কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ধরনের কোনো কাজে সহায়তা থেকে বিরত থাকতে ওই প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, প্রথমত ১৯৪৭ সালের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট-এর ৩ ধারা অনুসারে কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নেওয়া ছাড়া কোনোভাবেই মানি চেঞ্জার বা মানি এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। আইনের এ ধারা লঙ্ঘন করে কার্যক্রম পরিচালনা করা একই আইনের ২৩(১) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অবস্থায় এ ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাংকসহ সংশ্নিষ্টদের সহযোগিতা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ বিষয়ে সতর্কীকরণ নোটিশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, সব শাখা, উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকের আউটলেটের নোটিশ বোর্ডে ও দর্শনীয় স্থানে প্রদর্শনের পাশাপাশি ব্যাংক ও এমএফএসের ওয়েবসাইটের হোমপেজে প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে।