ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিত্যপণ্যসহ বিশ্বে সবকিছুর দাম বেড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই এখন রিজার্ভ ব্যবহার করে চলতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, যুদ্ধের জন্য সবকিছুর দাম বাড়ছে। আমাদের রিজার্ভ ব্যবহার করে চলতে হচ্ছে, এটা মানুষের জন্যই। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও তা-ই করছে। তাই আমি আবারও বলব আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শনিবার জাতীয় সমবায় দিবসের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদিও এখন এই ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনাভাইরাসের কারণে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। এর ধাক্কা আমাদের দেশেও এসে পড়েছে। মূল্যস্ফীতির জন্য আজ প্রত্যেকটা দেশই হিমশিম খাচ্ছে। প্রত্যেককে রিজার্ভ ব্যবহার করেই চলতে হচ্ছে। আমাদেরও করতে হচ্ছে। এটা করতে হচ্ছে গণমানুষের জন্যই।

‘এটা ব্যবহার হচ্ছে সাধারণ মানুষের খাদ্য কেনা বা কৃষিকাজ যাতে ঠিকমতো হয়। সার কিনতে হচ্ছে, ভোজ্যতেল কিনতে হচ্ছে, কিন্তু খুব উচ্চ মূল্যে। পরিবহন ব্যয়ও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সেদিকে লক্ষ রেখেই সবাইকে মিতব্যায়ী হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে সব দেশেই খাদ্যাভাব। জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। উন্নত দেশগুলোর কথাই আমি বলছি, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইউরোপের কথা আমি বলছি। সে ক্ষেত্রে আমাদের আরও উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়ানো এবং সঞ্চয় করা। যাতে করে, এই অভিঘাত থেকে দেশের মানুষ রক্ষা পায় সে ব্যবস্থাটা নিতে হবে।

‘আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি, প্রতিটি ঘরে। যদিও এখন যুদ্ধ ও স্যাংশনের (নিষেধাজ্ঞা) কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা গ্যাস নিজস্ব যতটুকু ব্যবহার করতে পারছি, অতিরিক্ত গ্যাস যেটা আমরা ক্রয় করতাম মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া ও পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়াতে…সবকিছুই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আশা করি এ অবস্থা বেশিদিন থাকবে না। আমরা সোলার প্যানেল দিচ্ছি। এ ছাড়া আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে, জলবিদ্যুৎ যেমন নেপাল-ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ ক্রয় করার পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। যদিও এটি সময়সাপেক্ষ কিন্তু এ অবস্থা থেকে আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারব। আমাদের দেশে সকলকে একটু সঞ্চয়ের দিকে নজর দিতে হবে।’

রিজার্ভের টাকা ব্যবহার করেই সবাইকে কোভিডের টিকা দেয়া হয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘কোভিড যেমন আমরা সফলতার সাথে মোকাবিলা করতে পেরেছি। যখন সারা বিশ্ব অর্থনীতি এই কোভিডের কারণে পর্যুদস্ত, আমরা কিন্তু বিনা পয়সায় সকলকে ভ্যাকসিন দিয়েছি, যেকোনো উন্নত দেশও পারেনি। কোভিড পরীক্ষা ও টিকা দেয়া সম্পূর্ণ সরকারের পয়সায় এবং আমাদের রিজার্ভের টাকা ব্যবহার করেই ভ্যাকসিন কিনে সকলকে দিয়েছি বিনা পয়সায়। যেন আমাদের দেশের মানুষ সুস্থ থাকে। বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ করাই আমাদের লক্ষ্য।

‘কিন্তু আমাদের উন্নয়নটা করতে গেলে আমি মনে করি সমবায়কে গুরুত্ব দিতে হবে। আমি মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু সেই সাথে প্রত্যেক মানুষের একটি চিন্তা থাকতে হবে নিজের জীবন ও জীবিকাকে উন্নত করার। সে ক্ষেত্রে সে কাজ করার সুযোগ আমরা করে দিতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক সেক্টরই আমরা বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি যাতে কর্মসংস্থান বাড়ে। কৃষি উৎপাদন বা মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য সমবায় একান্ত প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কারণ, এত ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশে সমবায় আমাদের অনেক সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। সেদিকে লক্ষ রেখেই সমবায়কে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বর্তমানে যেমন দুধ ও আমিষ, এটা যাতে ঘাটতি পূরণ হয় সে ব্যবস্থা আমরা নিতে পেরেছি।

‘প্রত্যেককে উৎপাদন বাড়াতে হবে। এতটুকু জমিও যেন পড়ে না থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...