এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল ১২৮ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এর ফলে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে গত সোমবার আকুর এই দায় সমন্বয় করা হয়েছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের আমদানি দায় বাবদ আকুকে ১২৮ কোটি ডলার (১.২৮ বিলিয়ন) দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে আকুর দায় বাবদ ১২১ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার দায় কিছুটা বেড়েছে। মূলত এলসি খোলা আগের মাসগুলোর তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ায় কারণে দায় বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ জানুয়ারি আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম ৬ পদ্ধতি অনুযায়ী তাদের কাছে গ্রস রিজার্ভের স্থিতি ছিল ২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। এরপর আকু বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ এখন ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসেবে ৩ জানুয়ারি রিজার্ভ ছিল ২৬.৯৯ বিলিয়ন ডলার। আকুর দায় পরিশোধের পর তা কমে ২৫ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে এশিয়ার নয়টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, তা প্রতি দুই মাস পর নিষ্পত্তি হয়। তবে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্যদেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ।
তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে শ্রীলঙ্কা। আকুর বাকি দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে দুই মাস পরপর লেনদেনের অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এসব দেশের মধ্যে ভারত পরিশোধের তুলনায় অন্যান্য দেশ থেকে বেশি ডলার আয় করে। বাকি দেশগুলোর অধিকাংশকেই আয়ের চেয়ে বেশি ডলার খরচ করতে হয়।
আকুর সদস্যদেশগুলো থেকে যে পণ্য আমদানি হয়, তার মূল্য হিসেবে ব্যাংকগুলো প্রতি সপ্তাহেই ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়। প্রতি দুই মাস পরপর ব্যাংকগুলোর পক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ দায় পরিশোধ করে থাকে। তখন রিজার্ভ হঠাৎ কমে যায়, এরপর আবার বাড়ে।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠেছিল ২০২১ সালের আগস্টে। তবে সংকট মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি, নতুন করে ঋণ কম পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নেমেছে। মাঝে অবশ্য রিজার্ভ আরও কমে গত ১৩ ডিসেম্বর ১৯ দশমিক ১৭ বিলিয়নে নেমেছিল। তবে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৯ কোটি ডলার, এডিবির ৪০ কোটি ডলার এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১০৪ কোটি ডলার কিনে বাড়ানো হয়। মূলত আইএমএফের শর্ত পূরণের জন্য গত ডিসেম্বরে রিজার্ভ বাড়ানোর ব্যাপক চেষ্টা ছিল।