সূত্র জানায়, বর্তমান রিজার্ভে তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। এদিকে নতুন এলসি খোলা এবং আগের এলসিসহ অন্যান্য ঋণ পরিশোধ করতে হয়। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে নভেম্বরের শুরুতে। এতে রিজার্ভ আরও কমে যেতে পারে।
বাংলদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে। এক সপ্তাহ আগে তা ছিল ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন। সামষ্টিক অর্থনীতিবিদ ও নীতি-বিশ্লেষকরা এই রিজার্ভ কমে যাওয়ার জন্য বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো বিলম্বিত পাওনা পরিশোধ, বিনিয়োগকারীদের বিদেশে এফডিআই মুনাফা গ্রহণের প্রবণতা, অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস, মূলধন উত্তোলন এবং মানি লন্ডারিং।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুধবার জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) রিজার্ভ গণনা পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মঙ্গলবার বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।
এক সপ্তাহ আগে ২১ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। কয়েক দিনের ব্যবধানে তা থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার কমে বর্তমান রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।
ম্যাক্রো-ইকোনমিস্ট ও পাবলিক পলিসি অ্যানালিস্ট ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘জ্বালানি আমদানি-রপ্তানি বিলম্বিত হওয়া এবং পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের এফডিআই মুনাফা বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কারণে এটি ঘটেছে।
‘বিলম্বিত পাওনা পরিশোধ না করা হলে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আমদানি, বিশেষ করে জ্বালানি সংগ্রহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা বিবেচনা করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও তাদের মুনাফা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চাপে রয়েছেন।’
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রেমিট্যান্স আহরণ কমে যাওয়া এবং মানি লন্ডারিং বেড়ে যাওয়ার ফলে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।
‘অনিশ্চয়তা থাকায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে যদি একটি স্থিতিশীল সরকার গঠিত হয়, তাহলে আস্থার মাত্রা উন্নত হওয়ার কারণে অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সেপ্টেম্বরের শুরুতে দেশের গ্রস রিজার্ভ (ইডিএফ তহবিল ও রিজার্ভ থেকে ঋণ অন্তর্ভুক্ত) ছিল ২৯ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। বুধবার শুরুতে তা কমে দাঁড়ায় ২৭ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে।
বর্তমানে গড় মাসিক আমদানি ব্যয় ৬ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে তিন মাসের আমদানি চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন হবে ১৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ব্যয় ব্যবস্থার বাংলাদেশ ব্যাংক নীতির অধীনে তিন মাসের সামান্য বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যেতে পারে। আমদানিতে ব্যয় আরেকটু কমিয়ে আনলে সেক্ষেত্রে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় বাজারে ডলারের প্রবাহ কমে গেছে। এদিকে নতুন এলসি খুলতে হবে এবং আগের এলসির ঋণ পরিশোধ করতে হবে। পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণসহ অন্যান্য ঋণও পরিশোধ করতে হয়।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে হবে নভেম্বরের শুরুতে। এতে রিজার্ভ আরও কমে যেতে পারে।
আইএমএফ-এর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৪৮০ মিলিয়ন ডলার নভেম্বরে মওকুফ হতে পারে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কিছু ঋণও সে সময় ছাড় হতে পারে। তখন রিজার্ভ কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা আছে। আর বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।