ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

পতিত সরকার ভঙ্গুর অর্থনীতি রেখে গেছে। এর ফলে রাজস্ব আদায়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে হাত না দিয়েই দুই বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মহম্মদ ইউনূস।

রোববার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অক্টোবরে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ শতাংশ। আমরা যখন কাজ শুরু করেছি তখন দেশের অর্থনীতি ছিলো বিপর্যস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো তলানিতে। এই রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন উন্নতির পথে। গত তিন মাসে রিজার্ভে হাত না দিয়েই দুই বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে পেরেছি। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সব বিভিন্ন দাতা সংস্থা ইতিমধ্যে ঋণ ও অনুদান হিসেবে ৮ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি আমাদের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সচল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম ১০০ দিন অতিক্রম করলাম। কঠিন এক পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব গণ অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট সরকার প্রধান পালিয়ে গেলে দেশ সরকার-শূন্য হয় সাময়িকভাবে। পুলিশ প্রশাসন ও এসময় সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে উদ্বেগজনক এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্বৈরশাসনে বিপর্যস্ত এই দেশকে আমাদের সবাইকে মিলে পুনর্গঠন করতে হচ্ছে। জুলাই-অগাস্ট বিপ্লবের পর আমরা এমন একটি দেশ হাতে পেয়েছি যার সর্বত্র ছিল বিশৃঙ্খলা। স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিপ্লব চলাকালে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক জনতার শহিদি মৃত্যু হয়। সরকার প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য অত্যন্ত যত্নের সাথে জোগাড় করছে। এই বিপ্লবে আহত হয়েছে ১৯,৯৩১ জন। আহতদের জন্য ঢাকার ১৩টি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিনই তালিকায় আরো নতুন নতুন শহিদের তথ্য যোগ হচ্ছে যারা স্বৈরাচারের আক্রোশের শিকার হয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। প্রতিটি হত্যার বিচার আমরা করবোই। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তার কাজও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইবো।’

‘কেবল জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, আমরা গত ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করবো। অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, খুন হয়েছে এই সময়ে। আমরা গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছি। কমিশন অক্টোবর পর্যন্ত ১,৬০০ গুমের তথ্য পেয়েছে। এই সংখ্যা ৩,৫০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকেই কমিশনের কাছে গুমের অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা দ্বিধাহীন চিত্তে কমিশনকে আপনাদের অভিযোগ জানান। কারও সাধ্য নেই আপনাদের গায়ে আবার হাত দেয়’ আরও যোগ করেন ড. ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, যতই শক্তিশালী হোক, অভিযুক্তদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। জাতিসংঘের সহযোগিতায় হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এগিয়ে চলছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান প্রকৌশলীর সাথে কথা হয়েছে। গণহত্যায় জড়িতদের আন্তর্জাতিক আদালতেও বিচার করা হবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...