সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে, তা থেকে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ রবিবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র সংগঠন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার যে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে, তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা এর থেকে বেরিয়ে যেও না।” তিনি এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাত্রদের সার্বক্ষণিক কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।

সভার শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহত শিক্ষার্থীদের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এ সময় হতাহতদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ড. ইউনূস। কাঁদতেও দেখা যায় তাকে।

গত ১৫ বছরের অপশাসনের কথা স্মরণ করে ড. ইউনূস শিক্ষার্থীদের বলেন, এতদিন তারা চুপচাপ স্বপ্নের মধ্যে ছিলো এবং আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিলো। এরা কি এখন চুপচাপ বসে থাকবে। না, তারা খুব চেষ্টা করবে আবার তোমাদেরকে দুঃস্বপ্নের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার। চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখবে না। কাজেই যে কাজ শুরু করেছো, তা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে বেরিয়ে যেও না।

দেশের সফল অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে নোবেল বিজয়ী ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত এই সুযোগ আসেনি। তবে সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়। এই সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশের আর কোন ভবিষ্যৎ থাকবে না। রাষ্ট্র আর থাকবে না। কাজেই এটা শুধু রাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্র হিসেবে যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটা করতে হবে।”

তরুণরা কোন যাদুমন্ত্রে বাংলাদেশে বিপ্লব সংগঠিত করেছে, তা দেখতে সারা দুনিয়ার মানুষ এ দেশে আসবে এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “দুনিয়ার মানুষ দেখতে আসবে, তোমাদের কাছ থেকে শিখতে আসবে। তোমাদের কাছে জানতে চাইবে- কোন মন্ত্র দিয়ে এই বিপ্লব করেছো। এই মন্ত্র তারা শিখতে চাইবে।”

অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তরুণরা দেশের হাল ধরেছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, তরুণরা দেশের হাল ধরেছে, তারা অনন্য এক বাংলাদেশ তৈরি করে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ চিন্তায় অনড় থাকার পরামর্শ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “তোমাদের চিন্তা স্বচ্ছ ও সঠিক। তোমরা নিজ নিজ চিন্তায় অনড় থাকো। কেউ যদি স্বপ্ন পূরণের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দেয়, সেটা গ্রহণ করো না।”

তিনি বলেন, “স্বপ্ন বাস্তবায়ন থেকে যদি আমরা দূরে সরে যায়, দেশবাসী তাহলে আমাদেরকে সতর্ক করে দেবে। আমাদের কারোর কোনো ইচ্ছা নেই এই স্বপ্নের বাইরে যাওয়ার। আমাদের সার্বক্ষণিক কাজ হলো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। একযোগে এই কাজ করতে হবে।”

আহতদের হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “যখন হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের দেখার জন্য যাই, তাদের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। একটা ছেলে, একটা মেয়ে এইরকমভাবে কীভাবে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই দিকে পা চলে গেছে, ওই দিকে মাথা।”

আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে ড. ইউনূস বলেন, “একজন তাজা তরুণ রংপুরে আমাকে বললো, ফুটফুটে একটা ছেলে, স্যার আমি সারাজীবন ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলাম। ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম। এখন দেখেন আমার পা কেটে ফেলেছে। সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে স্যার ক্রিকেট খেলবো কী করে? ক্রিকেট তার মাথা থেকে যাচ্ছে না।”

তিনি বলেন, “আমাদের যোগ্যতা না থাকতে পারে, ক্ষমতা না থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের প্রতিজ্ঞা রইলো, আমরা স্বপ্ন পূরণ করবো। হাসপাতালের দৃশ্য এবং আন্দোলনের প্রতিদিনের ঘটনা মানুষকে জানাতে হবে বোঝাতে হবে এর পেছনে কী ছিল।”

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *