জুন ২৯, ২০২৪

বিভিন্ন সময়ে বিশেষ ছাড় দেয়ার পরও ‘অর্থনীতির গলার কাঁটা’ খেলাপি ঋণ যেন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতির মধ্যে খেলাপি ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ব্যাংক। চলতি বছরের মার্চ শেষে সরকারি এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। আর গত দুই বছরে এ ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৭ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট খেলাপির প্রায় অর্ধেকই বেড়েছে শেষ দুই বছরে (মার্চ’২১-মার্চ’২৪)।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংকগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের অবস্থা খুবই নাজুক। ইতোমধ্যে বিতরণ করা ঋণের ৬৩ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ব্যাংকটির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে মার্জার আতঙ্কে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এছাড়া গত দুই বছরে এ ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫৭০ কোটি টাকা।

এদিকে মার্চ শেষে বিডিবি পিএলসি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮৭৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৩৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। মার্চ’২১-মার্চ’২৪ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এ ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪০ কোটি টাকা।

গত দুই বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এর ফলে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে ব্যাংকটি। গত মার্চ শেষে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকায়। ২০২১ সালের মার্চ শেষে যার পরিমাণ ছিলো ১৩ হাজার ২১২ কোটি টকাা। তাতে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৩১ শতাংশই এখন খেলাপি। খেলাপি ঋণের বড় অংশ অনিয়মের মাধ্যমে দেওয়া।

আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অগ্রণীর বিতরণ করা ঋণের ২৮ শতাংশই খেলাপি হয়েছে পড়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে এ ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এর দুই বছর আগেও যার পরিমাণ ছিলো ৯ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। আর্থাৎ আলোচ্য এ সময়ের মধ্যে অগ্রণীর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

এরপরই খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির তালিকা দখল করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত রুপালী ব্যাংক। গত মার্চ শেষে এ ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২১ শতাংশ। দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০২১ সালের মার্চ শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিলো ৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে কম খেলাপি ঋণ সোনালী ব্যাংকের। এ ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। গত মার্চ শেষে এ ব্যাংকটির খেলাপি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৫৮ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের পুরো ব্যাংক খাত প্রভাবশালী গ্রাহকদের কাছে জিম্মি। নিয়ম মেনে ঋণ না দেওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা না থাকা ও খেলাপিদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের উদার নীতির কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ জন্য অনেকেই ইচ্ছা করে ঋণ শোধ করছে না। এর ফলে মানুষের আমানত আরও ঝুঁকিতে পড়ছে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত এ ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিলো ৭৯ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। মার্চ প্রান্তিক শেষে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৫ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলারের যে ঋণ দিয়েছে, তার বিপরীতে শর্ত দেওয়া হয় ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। আইএমএফের ওই শর্তের পর বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয় ব্যাংকগুলোকে। তবে গত মার্চ পর্যন্ত সময়ে খেলাপি ঋণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো ব্যাংক।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *