নভেম্বর ৮, ২০২৪

ব্যাংকগুলোর হাতে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে রপ্তানিকারকদের রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা জমা রাখার সীমা আবার অর্ধেকে নামিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে রপ্তানিকারকদের নিজস্ব হিসাবে সীমার বেশি থাকা ডলার ব্যাংকের হাতে চলে আসবে। এর বিপরীতে রপ্তানিকারকরা টাকা পাবেন। অন্যদিকে সীমা কমিয়ে দেওয়ায় রপ্তানি আয় থেকে নতুন করে ব্যাংকের কাছে আগের চেয়ে বেশি ডলার যাবে।

গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এক নির্দেশনায় গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই হার অর্ধেকে নামিয়ে আনে। এর পর জানুয়ারি থেকে আগের নিয়ম চালু হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল এক প্রজ্ঞাপন জারি করে অনির্দিষ্টকালের জন্য আবার ইআরকিউ হিসাবে জমার সীমা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে।

বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী রপ্তানি আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ ইআরকিউ হিসাবে জমা রাখতে পারেন রপ্তানিকারকরা। রপ্তানি পণ্য ও সেবা তৈরিতে স্থানীয় মূল্য সংযোজন অনুযায়ী, ওই হিসাবে কোন খাতের উদ্যোক্তারা কত অংশ বৈদেশিক মুদ্রা জমা রাখতে পারবেন, তা নির্ধারণ করা রয়েছে। যেমন– তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা ১৫ শতাংশ রাখতে পারেন। অপরদিকে সফটওয়্যার, ডেটা এন্ট্রি কিংবা তথ্য প্রযুক্তি খাতের অন্যান্য সেবা রপ্তানির বিপরীতে আসা বৈদেশিক মুদ্রার ৭০ শতাংশ ইআরকিউ হিসাবে রাখা যায়। অন্যান্য সেবা খাতে এ হার ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকালের প্রজ্ঞাপনে জমা রাখার হার ১৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ, ৬০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ এবং ৭০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ করেছে।

ডলার সংকট নিরসনে বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত বছরের জুলাই মাসে ইআরকিউ হিসাবে জমা থাকা বৈদেশিক মুদ্রার ৫০ শতাংশ দ্রুত নগদায়ন করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ইআরকিউ হিসাবে জমা রাখার সীমা অর্ধেক করে দেয়, যা গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল।

বহুমুখী পাটপণ্যের একজন রপ্তানিকারক জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের ফলে তারা চাপে পড়বেন। বিদেশে বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ, বাজার উন্নয়ন ও গবেষণাসহ নানা কাজে ইআরকিউ হিসাব থেকে তারা অর্থ খরচ করেন। সীমা কমানোর কারণে এ ধরনের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, রপ্তানিকারকদের হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা রাখার সীমা কমিয়ে দেওয়ায় ব্যাংকগুলোর কাছে বাড়তি কিছু ডলার আসবে। তবে ডলারের আয় কম থাকায় এবং বিনিময় হারে নিয়ন্ত্রণ থাকায় বর্তমান সংকট থেকে বের হওয়া খুব কঠিন। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ব্যাংকগুলো নিজেরা মিলে ডলারের একটি দর নির্ধারণ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আমদানি আগের তুলনায় কমলেও প্রবাসী আয়ে পতনের কারণে ডলার সংকট কাটছে না। গত জুলাই এবং আগস্ট মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক কমেছে। চলতি মাসেও পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে সরকারের জরুরি আমদানি কাজে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি মাসে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১০৫ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরে গত জুলাই ও আগস্ট দুই মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৩৫৭ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ১৪ শতাংশ কম। ডলার আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী আইএমএফের ব্যাল্যান্স অব পেমেন্ট ম্যানুয়াল অনুযায়ী, গত ২০ সেপ্টেম্বর রিজার্ভ দাঁড়ায় ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। গত এক বছরে রিজার্ভ কমেছে প্রায় ১০ বিলি

য়ন ডলার।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...