দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুলাই-এপ্রিল ১০ মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। আগের মাসে এ হার ছিল ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
বুধবার (৩ মে) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৪৩২ কোটি ১১ লাখ (৪.৩২ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৬০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। করোনা মহামারির মধ্যে রপ্তানির এই অর্থ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্র গত বছরের একই সময়ে অর্থাৎ জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে বাংলাদেশ থেকে ৩৪৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পোশাক আমদানি করেছিল।
ডিসেম্বরে বড়দিনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, ‘সে হিসাবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বালাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি সাড়ে ৬ বিলিয়ন (৬৫০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, একক দেশ হিসেবে বালাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয় বড় বাজার হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এই বাজারে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ২০১৯ সালে; ৫৯২ কোটি ১৯ লাখ ডলার।
২০২০ সালে করোনার কারণে তা কমে ৫২২ কোটি ৮২ লাখ ডলারে নেমে আসে। ওই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের রপ্তানি কমেছিল ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ।
গত ৫ অক্টোবর প্রকাশিত ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্সের আওতাধীন অফিস অফ টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস (অটেক্সা) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪৩২ কোটি ১০ লাখ ৯৪ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি গত বছরের একই সময়ে আমদানি করে ৩৪৮ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পোশাক। এ হিসাবে আমদানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ।
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা পোশাকের অধিকাংশই কটনভিত্তিক। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে মার্কিন বাজারে সবচেয়ে বেশি আমদানি হওয়া পণ্য হলো মেনস বা বয়েজ কটন ট্রাউজার। ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে ৯৮ কোটি ডলারের এ পণ্য আমদানি হয়েছে। এ ছাড়া উইমেন বা গার্লস কটন স্ল্যাকস, মেনস বা বয়েজ নিট শার্ট, ওইমেনস বা গার্লস নিট ব্লাউজে পোশাক পণ্যগুলোর আমদানি বেড়েছে যথাক্রমে ২৮, ৭৪ ও ৫৯ শতাংশ।
গত জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ক্রয় পূর্বাভাসসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। ‘২০২১ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চ মার্কিং স্টাডি’ শীর্ষক ওই জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বাণিজ্যের গতি এখনও দুর্বল। পাশাপাশি শিল্পের সামাজিক ও শ্রম কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনায় এখনও ঝুঁকি দেখছেন তারা।
তবে সোর্সিং কস্ট বা পণ্য ক্রয় বাবদ ব্যয় বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনও আকর্ষণীয়। মূলত মূল্য সুবিধায় পণ্য কিনতেই ঝুঁকি সত্ত্বেও বাংলাদেশমুখী হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক পণ্যের ক্রেতারা।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক মানুষকে করোনার টিকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। তাই ওই দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী গ্রীষ্ম ও বসন্ত মৌসুমের জন্য করোনার আগের মতোই ক্রয়াদেশ দিচ্ছে। তা ছাড়া মিয়ানমারে সেনাশাসন ও ভারতে করোনার ভয়াবহতার কারণেও কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়।
‘এর আগে থেকেই কিছু ক্রয়াদেশ চীন থেকে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে স্থানান্তর করেন আমেরিকার ক্রেতারা। ভিয়েতনামে লম্বা সময় লকডাউন থাকার কারণেও কিছু ক্রয়াদেশ এসেছে। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি ক্রয়াদেশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তার সুফল আগামী দিনগুলোতে পাওয়া যাবে।’
নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘মার্কিন ক্রেতাদের জন্য বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের চাহিদা ক্রমেই আরও বাড়বে বলে আমরা মনে করি। আমাদের হিসাব বলছে, চলতি বছরে দেশটিতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশেরও বেশি হবে।’
হাতেম বলেন, ‘কারখানাগুলোতে প্রচুর ক্রয়াদেশ রয়েছে। সে জন্য আগের চেয়ে দামও কিছুটা বেশি নিতে পারছেন উদ্যোক্তারা। আশা করছি, আগামী মাসগুলোতে নিট পোশাক রপ্তানিতে ২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হবে।’
তবে সুতার দামের অস্থিরতার কারণে রপ্তানিকারকরা খুব একটা স্বস্তিতে নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই-এপ্রিল ১০ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫৭৭ বিলিয়ন ডলারের। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেশি। আগের মাস মার্চে প্রবৃদ্ধির এ হার ছিল ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুলাই-এপ্রিল ১০ মাসের তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় লক্ষ্য থেকেও পিছিয়েছে। ১০ মাসে কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে। এ সময়ে কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ১৭৭ বিলিয়ন ডলার। আগের মাস মার্চে তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ১০ মাসে ওভেন পোশাকের প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে। এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। ১০ মাস ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৭ দশমিক ৬১০ বিলিয়ন ডলারের। আর নিট পোশাক রপ্তানি রয়েছে ২০ দশমিক ৯৬৮ বিলিয়ন ডলারের। প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ।