চীনকে মোকাবেলার ইস্যুতে কিছু ক্ষেত্রে ভাল সমঝোতা থাকলেও সামিগ্রকভাবে উষ্ণতা কমে এসেছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে। কানাডার সাথে ভারতের বিরোধ ওই সম্পর্কে আরও পানি ঢেলেছে। এ ঘটনার প্রভাবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি তার সহকর্মীদের কাছে এমন আশংকা প্রকাশ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে পলিটিকো একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
খবর হিন্দুস্থান টাইমসের
তবে ভারতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এ রিপোর্টের প্রতিবাদ করেছে। দূতাবাস দাবি করেছে, বিষয়টি সত্য নয়। বরং রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।
উল্লেখ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ) ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে সুসম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কখনোই তেমন ঘনিষ্টতা ছিল না। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে চীনের উঠে আসার সম্ভাবনার মুখে আগের হিসাব কিছুটা পাল্টে যায়। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র-উভয় দেশ বর্তমানে চীনকে তাদের প্রধান শত্রু মনে করছে। এই প্রেক্ষিতে চীনকে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত সামরিক জোট কোয়াডে যোগ দেয় ভারত।
কোয়াডে যোগদানের মধ্য দিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও নিবিড় হওয়ার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে তার অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। এই ইস্যুতে ভারতের নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়া (মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পাশে না থাকা) এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি অব্যাহত রাখার বিষয়টিকে ভালভাবে নেয়নি জো বাইডেন প্রশাসন।
এদিকে গত মাসে ভারতে অনুষ্ঠিত জি টুয়েন্টি সম্মেলনে অংশ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে সংবাদ সম্মেলন করতে না দেওয়ার ঘটনায় বেশ রুষ্ট হন জো বাইডেন। পরে ভিয়েতনাম সফরে গিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি। বাইডেন বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেন, তিনি নরেন্দ্র মোদীকে গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি ইস্যুতে তাগিদ দিয়েছেন।
দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের নড়বড়ে অবস্থার মধ্যে হঠাৎ উদয় হয়েছে ভারত-কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি।
গত মাসে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সংসদে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন, দেশটিতে অভিবাসী হওয়া শিখ ধর্মাবলম্বী হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় ভারতীয় সরকারি এজেন্টদের হাত রয়েছে। ভারত এই অভিযোগকে অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ প্রণোদিত আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের মধ্যে কূটনীতিকদের বহিস্কার-পাল্টা বহিস্কারের ঘটনা ঘটে।
ভারত-কানাডা বিরোধে যুক্তরাষ্ট্র সুস্পষ্ট কোনো পক্ষ না নিলেও তারা নিজ্জার হত্যায় ভারতীয় সরকারি এজেন্টদের ‘সম্ভাব্য’ জড়িত থাকার অভিযোগকে ‘গুরুতর’ বলে অভিহিত করে। পাশাপাশি পুরো বিষয়টির তদন্তের আহ্বান জানায়। তদন্তে কানাডাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করারও পরামর্শ দেওয়া হয়।
সম্পর্কের এমন টানাপোড়েনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের আশংকার খবরটি প্রকাশিত হলে তা সাড়া ফেলে দেয়।
এর মধ্যে মার্কিন দূতাবাস প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ‘রাষ্ট্রদূত গারসেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের জনগণ এবং সরকারের মধ্যে অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার জন্য প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করছেন৷ তার ব্যক্তিগত ব্যস্ততা এবং জনসাধারণের সময়সূচীই বলে দেয় যে রাষ্ট্রদূত গারসেটি ভারতে মার্কিন মিশন দিল্লির সঙ্গে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ, কৌশলগত এবং ফলপ্রসূ অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে প্রতিদিন কাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত গারসেটি ভারতীয় জনগণ এবং ভারত সরকারের সঙ্গে আমাদের শক্তিশালী অংশীদারিত্বের একজন চ্যাম্পিয়ন। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ, কৌশলগত এবং ফলপ্রসূ অংশীদারিত্ব।’